
মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই যে শিশু ভূমিষ্ট হয় তার দেহের গঠন যথাযথ রূপে হতে পারেনা বলে এসব শিশুকে অপরিণত শিশু বলা হয়ে থাকে। এদের ওজন কম থাকে বলে এ ধরনের শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এদের ক্যালরির চাহিদা থাকে বেশী, অথচ বেশী খাদ্য পরিপাকের মতো ক্ষমতা থাকে না। এ সময়েও মায়ের দুধ সর্বাপেক্ষা উত্তম। তবে বিশেষ ফর্মূলায় প্রস্তুত শিশুখাদ্যকে অনেকে অধিক উপযোগী মনে করেন। গরুর দুধের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান যুক্ত করে এসব শিশুখাদ্য প্রস্তুত করা হয়। এ ধরনের খাদ্যে অপরিণত ও কম ওজনের শিশু খুব দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। সময়ের আগে যে শিশু ভূমিষ্ট হয়, স্নেহপর্দাথ পরিপাক করার ক্ষমতা তার কম থাকে। এজন্য তার ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে দরকার অধিক পরিমাণে শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় উপাদানের।
এরকম শিশুখাদ্য প্রস্তুত করার সময় দুধ থেকে মাখন সরিয়ে নেওয়া হয়, ফলে দুধে প্রোটিনের অনুপাত বেড়ে যায়। এরকম প্রোটিনবহুল দুধের সাথে চিনি বা ল্যাকটোজ যোগ করলে দুধ শর্করাবহুল হয়।

অপরিণত শিশুর প্রোটিনের চাহিদা বেশী। প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন দৈনিক খাওয়াতে পারলে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক পূর্ণ শিশুর পর্যায়ে দাঁড়াবে। গরুর দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশী থাকায় অস্থি গঠনের কাজটিও সুচারুরুপে হতে পারে। তবে লোহার অভাবের দরুন গরুর দুধ খাওয়া শিশুকে প্রায়ই এনিমিয়ায় ভুগতে দেখা যায়। এ সময় আলাদা করে লোহা যুক্ত ওষুধ দেয়া হয় অথবা অবস্থাভেদে সরাসরি শিরায় রক্ত প্রবিষ্ট করানো হয়ে থাকে। পূর্ণ সময়ের শিশু অপেক্ষা অপরিণত শিশুর ভিটামিনের চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে ননী তোলা দুধে স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন ও অত্যাবশকীয় স্নেহজ এসিডের পরিমাণ কম থাকায় এইসব ভিটামিন আলাদা করে খাওয়ানো হয়।
অনেক সমসয় শিশুর পরিপাক যন্ত্রের অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকগণ ল্যাকটিক এসিড দুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এগুলি বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক উতপাদিত শুকনো গুড়া দুধ হিসাবে বাজারে পাওয়া যেতে পারে অথবা বাসায় প্রস্তুত করা যেতে পারে। গরুর দুধ ভালো মতো ফুটিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর ২ ফোটা ভিনেগার অথবা লেবুর রস দিলে ঐ রকম দুধ তৈরী হবে। অনেক সময় বিবিধ কারণে কম চর্বিযুক্ত দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়, তখন মাখন তোলা দুধ ব্যবহার করা হয়। যে সমস্ত শিশুর গরুর দুধে এলার্জি থাকে তাদের ছাগলের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

দুধের বিকল্পঃ কোন কোন নবজাতক শিশুর সকল রকম দুধেই এলার্জি থাকে। এদের জন্য বিভিন্ন শিশুখাদ্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মধ্যে দুধ একেবারেই নেই, অথচ পুষ্টি উপাদান গুলি এমনভাবে রয়েছে যা মায়ের দুধের মতো শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে। এই শিশুখাদ্য বিভিন্ন দেশে সয়াবিন থেকে প্রস্তুত করা হয়। সয়াবিনে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এবং এগুলো গুড়ো করে পানি মিশিয়ে দুধের মতো প্রস্তুত করা যায়। শিশুর পুষ্টির জন্য ল্যাকটোজ অপরিহার্য। সয়াবিনে ল্যাকটোজ নেই এবং এজন্য সয়াবিন দুধ প্রস্তুতকালে কিছু ল্যাকটোজ মিশিয়ে শিশুখাদ্যের মান উন্নত করা যায়। এছাড়া সয়াবিন দুধের সাথে ভিটামিন ও খনিজপদার্থ যোগ করা যেমনি প্রয়োজন প্রোটিনের মান উন্নতিকল্পে তেমন প্রয়োজন সীমিত অপরিহার্য এমাইনো এসিড যোগ করা। শুধু এলার্জির জন্যই নয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে দুধের উতপাদন বৃদ্ধি করার কোন ব্যবস্থাই সম্ভব নয়, সেখানে প্রয়োজনবোধে শিশুকে খাওয়ানোর জন্য সয়াবিন দুধ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া যেসকল শিশুর গ্যালাকটোমিয়া নামক প্রকৃতিগত বিপাকত্রুটি রয়েছে তাদের জন্য সয়াবিন দুধ একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য।
দুধ ছাড়ানোঃ মায়ের দুধ ৬ মাসের পর থেকেই কমতে থাকে। এসময় থেকে শিশু অন্যান্য খাদ্য খাওয়া শুরু করলে তখন থেকেই দুধ ছাড়াবার প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। তবুও এক বছর পর্যন্ত দুধই শিশুত প্রধান খাদ্য। এরপর থেকে দুধের উপর নির্ভরতা কমে আসে। শিশু পরিবারের সবার সাথে বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণ করতে শেখে। ১-২ বছরের মধ্যে এইভাবে মায়ের দুধ ছাড়ানো হয়ে থাকে। দ্রারিদ্যের কারণে যেসব শিশুকে গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ানোর সাধ্য থাকে না সেসব ক্ষেত্রে শিশুকে আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত।
আরো পড়ুনঃ
One Comment