
বর্তমানে আমরা সবাই এতোই ব্যস্ত যে নিজেদের জন্য সময় বের করে কিছু করে ওঠা সম্ভব হয় না। যার ফলে আমাদের নিজেদের সত্বাকে আমরা কোথাও যেন হারিয়ে ফেলছি। দিনের শেষে মাথা ব্যথা, মাথা ধরা, ক্লান্তি আমাদেরকে আটকে ধরছে। এসব ছেড়ে আমরা যদি প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটতে পারি তাহলে আমাদের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
অনেকেই অজুহাত ধরে কোথায় হাটবো? হাটার তো জায়গা নেই। কিন্তু না এমন কথা না বলে যেখানেই হোক হাটতে হবে। বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে বাসার ছাদে বা ব্যলকনিতে হাটতে পারেন। ব্যায়াম না করতে পারলে শুধু হাটুন।
হাটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। হাটা একটি সহজ ও সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম। প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের দিনে ৪৫-৬০ মিনিট হাটতে হবে। দ্রুতগতিতে হাটলে প্রতি মিনিটে প্রায় ৬ ক্যালোরি খরচ হয়। ৪৫ মিনিট দ্রুত গতিতে হাটলে প্রায় ২৫০ ক্যালরি খরচ হয়। হাটা শেষে অবশ্যই সামান্য বিশ্রাম নিতে হবে। তাহলে শরীর ও হার্ট ভালো থাকে।
হাটার সময় অঙ্গবিন্যাস করা প্রয়োজন। পিঠ সোজা রেখে মাথা তুলে হাটতে হবে। হাত শক্ত করে না রেখে হাত দুলাতে দুলাতে হাটতে বেশি উপকার পাওয়া যায়। হাটাকে একটি ব্যায়াম হিসাবে মনে করলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে হাটতে হয়। বেশিরভাগ মানুষই সেসব নিয়ম জানেন না তাই হাটতে গিয়ে ভুল করেন।
বর্তমানে স্মার্টফোনে ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করা যায়। তাই হাটার সময় ম্যাপামাইওয়াক বা অন্যান্য যন্ত্রের মাধ্যমে কয় পা হাটলেন তা গণনা করুন। ওজন যারা কমাতে চান তারা কমপক্ষে ৩ হাজার কদম হাটূন। স্বাবলীলভাবে হাটলে হাটার সময় কোন ক্লান্তি আসবে না। হাটার সময় একমনে হাটতে হবে। কোন বন্ধুর সাথে কথা বলে হাটা যাবে না। তাহলে ক্লান্তি কম আসে।
প্রতিদিন তিনবেলা খাবার পর তিনবেলা হাটার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট হাটা যেতে পারে। তাহলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক থাকে। একটানা ৪৫ মিনিট না হেঁটে ২০ মিনিট হাটার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাটা শুরু করুন। এতে দেহে শক্তি আবার ফিরে আসবে।
উপরের দিকে হাটতে পারেন। তবে এতে হয়রান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। একটু সামনের দিকে ঝুকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হবে।
সুষ্ঠু বিপাক হলে অনেক বেশি ক্যালরি ঝরানো সম্ভব হয়। তাই এই কাজটি করার জন্য গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে। হাটার পাশাপাশি গ্রিন টি খেলে খুব উপকার পাওয়া যায়।
ওজন উপরে তোলার ব্যায়াম করলে দেহে বাড়তি শক্তি ফিরে আসে। তখন আরো বেশি হাটা যায়। তাই হাটার পাশাপাশি আরো কিছু বাড়তি ব্যায়াম করতে হবে।
চিনিযুক্ত পানীয় খেলে দেহে বাড়তি শক্তি পাওয়া যায়। তাই ব্যায়ামের আগে বা পরে যেকণ সময় একটি চিনিযুক্ত পানীয় পান করার অভ্যাস করতে পারেন। চিনিযুক্ত পানীয় পান করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
অনেকে মোটা হওয়ার জন্য অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণকে দায়ী করেন। ফলে ওজন কমাতে খাওয়া বন্ধ করে থাকে। তবে ওজন কমানো ও সুস্থ থাকার জন্য হাটার কোণ বিকল্প নেই। শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়ার কারণে শরীরের ঘাটতি পূরণ করতে নির্দিষ্ট সময় পর পর খাদ্য গ্রহণ করতেই হয়।
ওজন কমানোর জন্য খাদ্য গ্রহণ কমালে হীতে বিপরিত ঘটতে পারে। তাই সবসময় আমরা যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করবো ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য আমাদের শরীর থেকে ক্ষয় করতে হবে। তাই হাটাহাটি করা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাটার অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১। নিয়মিত হাটলে শরীর থেকে ক্যালরি ক্ষয় হয়। হাটলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল এর পরিমাণ বাড়ে ও খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এর পরিমাণ কমে। খাদ্য গ্রহণের পর কিছুটা হাটলে শরীর বেশ ঝরঝরে লাগে ও খাদ্যদ্রব্য সহজেই পাচিত হয়।
২। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও হাটার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত হাটলে শরীরের পেশিতে অনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুকি ও কমে আসে।
৩। নিয়মিত হাটলে ক্ষুদামন্দ্যা দূর হয়ে যায়। হাটার সময় আমরা যে খাবার গ্রহণ করি সেগুলো হজম হয়ে আবার ক্ষুধার সৃষ্টি করে। ফলে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার অনুপাত ঠিক থাকে।
৪। নিয়মিত হাটলে রক্তনালীর দেয়ালের চর্বি কম জমে। ফলে করোনারি হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। মূল করোনারি রক্তনালীতে কোণ ব্লক হলেও নিয়মিত হাটার ফলে ছোট রক্তনালী দিয়ে রক্ত সঞ্চালিত হতে থাকে। ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে যায়।
৫। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে বা যাদের গভীর ঘুম হয়না তাদের জন্য নিয়মিত হাটার প্রয়োজন আছে। নির্দিষ্ট সময় ধরে হাটার ফলে শরীর থেকে অনেক ঘাম নির্গত হয় ও শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে তাড়াতাড়ি ঘুম হয়।
৬। হাটার সময় যেহেতু মন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করতে থাকে তাই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মন নিমগ্ন থাকে না তাই মনে প্রশান্তি লাগে। মনকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাটার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৭। নিয়মিত হাটলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ও কমে যায়। হাটার সময় হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্র ও ফুস্ফুস ভালো থাকে।
৮। হাটার ফলে শরীরের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হতে থাকে। তাই হাটার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৯। নিয়মিত হাটলে মস্তিষ্কের এনডর্ফিন, ডোপামিন, সেরোটোনিনের মতো ভালো অনুভূতি তৈরীর রাসায়নিক নিঃসরণ বাড়ে। ফলে বিষণ্ণতা কমে গিয়ে মন ভালো থাকে। রাতে ভালো ঘুম হয়।
১০। শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে ও পেশিকে দৃঢ় করতে হাটার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হাটাহাটি, দৌড়ানো, সাতার, সাইক্লেনিং করলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দৃঢ় হয়।
১১। নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে শরীরের পেশির শক্তি কমে যায়। তাই নিয়মিত হাটাহাটি করলে পেশিগুলো নাড়াচাড়া করে। বিশেষ অণূ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল করতে পারে। ফলে কোষগুলো বিকশিত হয়।
১২। কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করলে বা হতাশ হলে এক জায়গায় বসে না থেকে হাটাহাটি করলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। তাহলে সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা ও বৃদ্ধি পায়।
১৩। মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্য হাটা খুব ভালো। তাহলে আর কোন ওষুধের দরকার হয়না। হাটলে কোষ্ঠাকাঠিন্য ও দূর হয়।
১৪। হাটাহাটি করলে বিষণ্ণতা ও দূর হয়ে যায়।
তবে খাবার গ্রহণ করার পরেই হাটাহাটি করা উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ফল খেতে পারবে ও কোন ফল খেতে পারবে না?
ডাস্ট এলার্জি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
3 Comments