
মাথায় উকুন বা Lice হওয়াটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। কিন্তু মাথায় উকুন থাকাটা একটা বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর বিষয়। মাথায় উকুন হলে মাথা সবসময় চুলকাতে থাকে ও সবসময় খুব বেশি অস্বস্তিতে কাটে। বাচ্চারা যেহেতু স্কুলে যায় তাই বাচ্চাদের মাথায় প্রথম বেশিরভাগ উকুন আসে ও আস্তে আস্তে তারপর সমস্ত বাড়ির সবার মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
উকুন মূলত মাথায় আসার ৭-১০ দিন পর থেকেই ডিম পাড়তে শুরু করে। বাচ্চা উকুন বড় হতে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। একসাথে ডিম থেকে অনেক উকুন হওয়ার কারণে মাথায় খুব দ্রুত অনেক উকুন হয়ে যায়। আবার মাথায় যতই উকুন নাশক ব্যবহার করা হোক না কেন উকুন যেতেই চায় না।
উকুন মূলত একটা ক্ষুদ্র আকারের পরজীবী প্রাণী। উকুন মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। মূলত বেশ কিছু কারণে উকুন এক মাথা থেকে অন্য মাথায় আসে।
উকুন নাশক শ্যাম্পু বা তেল ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হয়ে থাকে তাই অনেকেই এসব ব্যবহার করেনা। ফলে উকুন এক মাথা থেকে অন্য মাথায় বাড়তেই থাকে।
উকুন প্রতিরোধে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে-
উকুন হলে কিছু লক্ষণ দেখেই বোঝা যায় মাথায় উকুন হয়েছে। মাথায় উকুন হলে মাথা ও ঘাড়ের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে থাকে। অনেক শিশুদের মাঝে উকুন হলে বেশ অনেক দিন পর সংক্রমণ দেখা দেয়। চুল আচড়ানোর পর খালি চোখের চিরুনি দেখতে হবে। মূলত গোসলের পর যখন চুল ভেজা থাকে তখন চুল আচড়িয়ে দেখতে হয় চুলে উকুন হয়েছে কিনা।
যেহেতু বাচ্চারা স্কুলে যেয়ে উকুনের শিকার হয় তাই বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে কিছু জিনিস শেয়ার করা থেকে বিরত করতে হবে। যেমন-
- টুপি
- ঝুটি
- চুলের ক্লিপ
- চুলের যেকোন পিন
- যেসব জিনিস দুইটা শিশুর মধ্যে উকুন এনে দিতে পারে।

উকুন প্রতিরোধের কিছু ঘরোয়া উপায় আজ আমরা জানবো-
১। নারকেল তেল-
চুলের উকুন প্রতিরোধ করার জন্য নারকেল তেল খুব ভালো কাজ করে। নারকেল তেল মূলত ব্যবহার করা হয় উকুনের শ্বাসরোধ করতে। রাতে ৩-৪ চামচ নারকেল তেল ও কর্পূর গরম করে চুলে ও মাথার তালুতে লাগাতে হবে। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে নিলেই চলবে। সপ্তাহে ৫ দিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তাহলে উকুন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
২। নিম-
নিম একটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক। নিম উকুন মারতে খুব ভালো কাজ করে। নিম মাথার চুলকানি কমিয়ে মাথার স্কাল্পকে ময়েশ্চার করতে সাহায্য করে। নিমের পেস্ট বানিয়ে সপ্তাহে দুইদিন মাথার তালুতে লাগাতে হবে। আবার নিমের তেল ব্যবহার করেও মাথার উকুন দূর করা যায়। ভালো করে মাথার তালুতে নিমের তেল ম্যাসাজ করে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৩। লেবুর রস-
লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা আমাদের মাথার উকুন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সাথে আদা বেটে সেই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় আধা ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর মাথার চুল শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই পেস্ট ৪-৫ দিন চুলে লাগালে উকুন দূর হয়ে যায়।
৪। ভিনেগার-
উকুন প্রতিরোধে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। ভিনেগারে অ্যাসিটিক এসিড থাকে যা চুলের উকুন মারতে সাহায্য করে। ভিনেগার উকুনের ডিমকেও মেরে ফেলে। ভিনেগার ও মিনারেল ওয়েল সমপরিমাণ নিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে আমাদের মাথার তালুতে লাগাতে হবে ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। সকালে শ্যাম্পু করলে হবে। ২-৩ দিন সপ্তাহে এটা ব্যবহার করতে হবে।
৫। পেঁয়াজ-
ঘরোয়াভাবে উকুন তাড়াতে পেঁয়াজ একটি মোক্ষম উপায়। পেঁয়াজ বেটে নিতে হবে। তারপর তা থেকে রস বের করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে মাথায় লাগাতে হবে। তারপর মাথা ঢেকে ২ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। প্রথমে পরপর তিনদিন ব্যবহার করতে হবে। তারপর সপ্তাহে একদিন লাগালেই চলবে। উকুন মুক্ত হয়ে গেলে মাসে ১ দিন লাগালে আর চুলে উকুন আসতে পারবে না।
৬। মেয়নিজ-
মেয়োনিজ শুধু যে খাওয়াই যায় তাই নয়। মেয়োনিজ দিয়ে উকুন ও দূর করা যায়। প্রথমে চুলে মেয়োনিজ লাগিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা সেটা রেখে দিতে হবে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল শুকালে একটি সরু দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ে উকুন বের করে নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ১ বার ব্যবহার করলেই চলবে। টানা ২ মাস ব্যবহার করলে উকুন দূর হয়ে যাবে।
৭। ভেজা চুল আচড়ানো-
প্রথমে চুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে কন্ডিশনার লাগাতে হবে। তারপর চিকন চিরুনী দিয়ে আচড়িয়ে মাথার ত্বক থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে আচড়াতে হবে। তাহলে মাথার উকুন দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ