
গর্ভাবস্থায় নিজের শরীরের মাঝে আরেকটি প্রাণ বেড়ে উঠছে। সেই অনুভূতি এক অন্য রকমের অনুভূতি। গর্ভবতী অবস্থায় আবার নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও দেখা দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় একটি শিশু ২৮০ দিন বা নয় মাস ১০ দিন মাতৃগর্ভে থেকে বেড়ে উঠে। এসময় মায়েদের জন্য চাই বিশেষ যত্ন ও শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ।
গর্ভাবস্থায় অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ ও অপুষ্টির ফলে একটি অপুষ্ট শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে বা একটি স্বল্প ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। একজন নারী যদি অপুষ্ট থাকে তাহলে সে একটি অপুষ্ট সন্তান জন্ম দিবে। এজন্য বাংলাদেশ ‘ দ্বিগুণ বোঝা’ মোকাবেলা করছে। শিশুর যত্নে লক্ষ্যণীয় বিষয়
গত দশ বছরে নারীর স্বল্প ওজন সূচকের হার ৩৪ শতাংশ থেকে নেমে দাড়িয়েছে ১৯ শতাংশে। আবার পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজনের নারীর হার বেড়ে দাড়িয়েছে ৯ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে।
বাংলাদেশে ২৯ শতাংশের মতো মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। এর পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে কিশোরী মেয়েদের সন্তান জন্মদানের হার খুব বেশি।
বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরী মেয়েদের পুষ্টির অভাব বেশ অন্যতম সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। বাল্যবিবাহ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালনা করছে। মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টির দরুন মায়ের রক্তশূন্যতা, আমিষের অভাব ও দূর্বলতা দেখা যায়। তাই এসময় গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষ নজর দিতে হয়। মায়ের জন্য বিশেষ সুষম খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবারে কিছু খাদ্য উপাদান থাকতে হয়। যেমনঃ
১। ফলিক অ্যাসিডঃ ফলিক অ্যাসিডের অভাবে মায়ের রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলিক অ্যাসিড সন্তানের জন্মগত বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাভাবিক সময়ের থেকে গর্ভাবস্থায় চার গুণ বেশি ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছেঃ পালং শাক, লেটুস, শুকনো সিমের বিচি, ডাল, দুধ, ডিম, কলিজা ইত্যাদি।
২। আমিষঃ গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের ন্যায় আমিষের চাহিদাও বেশি থাকে। ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি ও স্তনগ্রন্থীর বৃদ্ধির জন্য আমিষের প্রয়োজন বেশি হয়। এসময় দৈনিক ৯০-১০০ গ্রাম আমিষ গ্রহণের প্রয়োজন হয়। আমিষজাতীয় খাদ্য হচ্ছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল ও শিমের বীচি।
৩। ক্যালসিয়ামঃ নবজাতকের জন্য হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য শেষের তিন মাসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হয়। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য হচ্ছে দুধ, দই, ডাল, মাছ, বাদাম, শালগম, বিট, সরিষাশাক, বাধাকপি ইত্যাদি। আবার অনেক ফলেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যেমনঃ কমলা ও আঙ্গুর।
৪। লৌহঃ একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দৈনিক ৩০ গ্রাম লৌহ বা আয়রন এর প্রয়োজন হয়। গর্ভকালীন সময়ে আরো একটু বেশি লৌহের প্রয়োজন হয়। গর্ভকালীন সময়ে ৩৮ গ্রাম লৌহের প্রয়োজন হয়। লৌহযুক্ত খাদ্য হচ্ছে বিট, খেজুর, সফেদা, পালং শাক, লালশাক, কচুশাক, কলিজা, শুকনো ফলমূল, সবুজ সবজি ও টক ফলমূল ইত্যাদি। মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় ও দুধ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য
এখন দেখে নিই গর্ভবতী অবস্থায় কিভাবে নিজের যত্ন নিতে হবেঃ
১। এসময় প্রচুর পানি পান করতে হবে।
২। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ২-৩ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
৩। এসময় প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন যুক্ত খাদ্য খেতে হবে।
৪। শিশু গর্ভাবস্থায় কেমন থাকবে তার বেশিরভাগ বিষয়ই নির্ভর করে মায়ের উপর। শিশুর সম্পূর্ণ পুষ্টি তার মায়ের দেহ থেকে নিয়ে থাকে। তাই এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। তাহলে মা ও শিশু উভয়ই ভালো থাকবে।
৫। মায়ের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন মাছ ও মাংস রাখতে হবে।
৬। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ দিতে হবে। তাহলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে।
৭। এসময় প্রচুর সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। এতে ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম থাকে।
৮। খাদ্যতালিকায় ডিম রাখা উচিত। এতে প্রচুর ক্যালরি, ভিটামিন, খনিজ লবণ, প্রোটিন থাকে।
৯। আম, তরমুজ, পেপে, কলা, আপেল, কমলা, মাল্টা খেতে হবে নিয়মিত।
১০। নিয়মিত ডাক্তারের চেকাপ করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুনঃ শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি করবেন?
One Comment