
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের অলিতে গলিতেই দেখা যায় নুডলসের দোকান, স্যুপের দোকান। আর বড় বড় শহরে তো চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কোন অভাবই নেই। চাইনিজ খাবার আমরা এখন প্রায় সকলেই খুব বেশি পছন্দ করি।
আবার অনেকে এসব খাবার বাসায় ও বানিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা কি আসলে জানি চাইনিজ খাবারের স্বাদ কেমন বা চাইনিজরা আসলে কোন ধরনের খাবার খেতেন। মনে হয় আমরা খুব কম লোকই জানি চাইনিজ খাবার সম্পর্কে। আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক চাইনিজ খাবার সম্পর্কে কিছু কথা।
১। চীনের মানুষের খাবারে পাঁচ ধরনের গন্ধ ও স্বাদ থাকতে হয়। মিষ্টি, টক, ঝাল, নোনতা ও তিতা স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে চাইনিজ দের খাবার। আবার চীনের অঞ্চলভেদে খাবারের স্বাদের ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। সিজুয়ানরা খায় বেশি ঝালযুক্ত খাবার। ক্যান্টনিজরা আবার সিiজুয়ানদের চেয়ে তুলনায় কম ঝাল খায়।
২। চীনের খাবারে মশলার পরিমাণ খুব কম থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত সয়া সস ও চিনি খাবারে যোগ করা হয়।
৩। আমরা মূলত চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গেলে প্রথমে স্যুপ দিয়ে খাবার শুরু করি। কিন্তু চাইনিজরা খাবারের শুরুতে স্যুপ খায় না। তারা মেইন কোর্সে স্যুপ খায়।
৪। চাইনিজরা খুব বেশি নুডলস পছন্দ করে। তাদের খাবারে নুডলস অন্যতম সঙ্গী। চীনের উত্তরাঞ্চলের মানুষ ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য গমের নুডলস, স্টিম করা বান বা কেক খায়। আবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খাবারের সাথে ভাত বা চালের নুডলস খায়।
৫। চাইনিজরা চাল ও ময়দার পার্থক্য খুব ভালো করে বোঝে। তাই উত্তরীয়রা ডাম্পলিং, নুডলস সব খায় মদয়ার তৈরী। আর দক্ষিণীয়রা খায় চাল দিয়ে ভাত বা নুডলস।
৬। আমরা বাঙ্গালিরা শুনে থাকি চীনারা সব খায়। আসলে এই সবের মধ্যে কি কি আছে তা কি আমরা জানি? এখন দেখি তারা আসলে কি খায়। চীনারা মূলত নড়াচড়া করতে পারে এমন সব খায়। যেমন- হাস, মুরগী, গরু, ভেড়া, সাপ, ব্যাঙ, ঈদুর ইত্যাদি।
৭। চীনারা খাবার অপচয় করা পছন্দ করে না। তাই তাদের খাবার টেবিলে দেখা যায় আস্ত মাছ, মুরগি। এসব খাবার তারা কাটা সহ খেয়ে ফেলে। যেসব মাছ বা মাংসের কাটা খুব নরম তারা সেসব মাছ মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু আমরা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যেয়ে বোনলেস মাংস অর্ডার করে থাকি। কিন্তু চীনারা কোন কাটাই ফেলে না। তারা সব চিবিয়ে খেয়ে নেয়।
৮। চাইনিজরা সবসময় তাজা মাছ, মাংস ও ফ্রেশ শাকসবজি খেতে পছন্দ করে। তারা সবধরনের সবজি ও ফলের জুস খেতে খুব পছন্দ করে। তারা আলু, পালং শাক, বাধাকপি, লেটুস, গাজর, অন্যান্য শাক ও সবজি খেয়ে থাকে। তারা অনেক শাক খেয়ে থাকে যেগুলোকে অনেকে ঘাস পাতা মনে করে। তারা যেহেতু এসব শাক সবজি খায় তাই তাদের অন্ত্রের চলাফেরা আমাদের থেকে অনেক বেশি হয়।
৯। ১৯৯০ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ফরচুন কুকির চল শুরু হয়। সারা বিশ্বে চাইনিজ রেস্তোরা ফরচুন কুকি পাওয়া যায়। কিন্তু আসলে চাইনিজরা জানেই না এই ফরচুন কুকি কি জিনিস।
১০। চাইনিজরা সাধারণত একই খাবার বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেয়ে থাকে। যেমন- চিকেন স্টিমড, ফ্রায়েড, শটার ফ্রায়েড, পিকলড ইন ব্রাইন, ডিপ ফ্রায়েড, রোস্টেড, সতে প্রভৃতি ভাবে খেয়ে থাকে। আবার মাছ সিদ্ধ, ঝোল, ভাজি, ম্যারিনেট করা, ঝাল, মিষ্টি ইত্যাদি নানা উপায়ে খেয়ে থাকে। এর বাইরে চীনের সাংহাই ও শেনঝেন এলাকায় বিশেষ পাত্রের মাঝে কাঁচা মাছ- মাংস সিদ্ধ করে খায়।
১১। এছাড়া চীনারা যা খায় সব খাবার তারা বাইট আকারে তৈরি করে নেয়। যাতে তারা ভালো করে চপস্টিক দিয়ে খেতে পারে। তারা ছুরি,কাচিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।
১২। চীনারা খাবারের সময়ের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক আগে। তারা সাধারণত সকালের খাবার ৫ টার দিকে খেয়ে থাকে। ৬ টায় তাদের সকালের খাবার বন্ধ হয়ে যায়। আবার দুপুরের খাবার ১২ টার মাঝে খেয়ে থাকে। রাতের খাবার সন্ধ্যা ৬ টার মাঝে খেয়ে থাকে। যাতে ঘুমানোর আগে তাদের সব খাবার হজম হয়ে যায়।
১৩। বাংলাদেশে মূলত কোন রেস্টুরেন্টে প্রেমিক প্রেমিকারাই ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে খাবার খায়। অন্য কেউ এতো সময় খাবার টেবিলে দেয় না। কিন্তু চাইনিজরা উলটা। তারা খাবার খেতে খেতে গল্প করে না। বরং গল্প করতে করতে খাবার খায়। তারা অনেক সময় নিয়ে খাবার টেবিলে খাবার খায়। তাদের টেবিল টেবিল করে খাবার ব্যবস্থা করা আছে। আবার একটা রুমে যেয়ে একান্তভাবে খাবার খাওয়ার ও সু্যোগ আছে।

চীনে আমরা যে চীনা খাদ্যের সবার্ধিক পরিচিতি পেয়েছে তা চীনে পাওয়া যায় না। তবে কয়েকটি খাটি খাবার রয়েছে। যেমন-
১। অরেঞ্জ চিকেন ও কাশু চিকেনঃ খাটি সংস্করণে সাদা চিকেন স্তন এর নিখুত অংশ দেওয়া হয় না। আমেরিকান সংস্করণ অনেক ঘন ও মিষ্টি হয়।
২। ইগ ফু ইয়াংঃ বাদামী চীনা অমলেট চীনের একটি দেশীয় খাবার।
৩। কুং পাও চিকেনঃ যদিও কুং পাও চিকেন একটি খাটি সিজুয়েনার থালা, পশ্চিমা সংস্করণ জ্বলন্ত মূল থেকে কম মশলাযুক্ত।
৪। মু শু শুষ্কঃ যদিও চীনে এই পোকার থালাটী খুজে পাওয়া খুব কঠিন হতে পারে।
৫। উইনথন স্যুপঃ চীনে সর্বাপেক্ষা সহজলভ্য খাটি তরমুজ সহজেই পাওয়া যায়। যদিও স্যুপের মধ্যে শুধু নুডলস থাকে, মাংস থাকে না।
৬। ফ্রাইড রাইসঃ চীনারা সর্বপ্রথম চাল ভাজা বা ফ্রাইড রাইসের প্রচলন শুরু করেন। পরে বাঙালিদের মাঝেও এই খাবারের প্রচলন দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ
3 Comments