
চুলের যত্নে ভিটামিন
আমরা এখন চুল নিয়ে অনেকেই ভুগছি। গরমে চুল ঝড়ে পড়ার সমস্যা অনেকেরই হচ্ছে। চুলের সমস্যায় কি ব্যবহার করবো এই নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। চুলের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। এই কেরাটিনের প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। আমরা চুলে দই, ডিম ব্যবহার করি তার প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। তাই আমাদের চুল ভালো রাখতে সবসময় প্রোটিন ব্যবহার করতে হয়। এই প্রোটিনের সাথে চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও ঝলমলে রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন। একেক ভিটামিনের কাজ একেক রকম। তাই কাজ অনুসারে আমাদেরকে সেসব ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে।
১. ভিটামিন ‘এ’
ভিটামিন এ কোষ বা সেলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চুলের গ্রোথের জন্য ভিটামিন এ খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া যেহেতু ভিটামিন এ ওয়েল সিকরেশনে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন এ আমাদের স্ক্যাল্পকে শুষ্ক হতে দেয় না। তাই আমাদের মাথার চুল কম পড়ে এবং চুলের বৃদ্ধি সুষ্ঠুভাবে হয়ে থাকে।
উৎস
কমলালেবু, সবুজ সবজি, হ্লুদ সবজি, গাজর, কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃচুল ঘন ও ঝলমলে করার উপায়
ব্যবহারঃ
এসব খাবার খেলে আমরা ভিটামিন এ পেয়ে থাকি। তবুও আমাদের কিছু ভিটামিন এ এর অভাব থেকে যায়। তাই এই অভাব দূর করতে আমরা সপ্তাহে একদিন দই, ডিম ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে চুলে দিতে পারি। এটি চুলে দিয়ে ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে চুল পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ পায়।
২. ভিটামিন ‘বি’
ভিটামিন বি এর মধ্যে ভিটামিন বি সেভেন রয়েছে। এই ভিটামিন বি এর মাঝে বায়োটিন অন্যতম। বায়োটিন চুলের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন বি রেড ব্লাড সেল তৈরী করতে সাহায্য করে। রেড ব্লাড সেল নতুন চুল তৈরীতে খুব উপকারী। তাই ভিটামিন বি প্রচুর গ্রহণ করলে নতুন চুলের গ্রোথ ভালো হয়।
উৎসঃ
লিভার, আমন্ড, সবজি, সি ফুড ইত্যাদি
আরো দেখুনঃগরমে পোশাক নির্বাচনে যেসব মাথায় রাখতে হবে
ব্যবহারঃ
ভিটামিন বি ব্যবহার করার চাইতে খাওয়াই ভালো। প্রতিদিন সকালে ৪/৫ টা আমন্ড ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রতিদিনের খাবারে ১০০ গ্রামের মতো মাছ বা মাংস রাখা প্রয়োজন।
৩. ভিটামিন ‘সি’
ভিটামিন সি এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপাদন করে। ভিটামিন সি থেকে কোলাজেন নামক প্রোটিন পাওয়া যায়। এই ভিটামিন সি এর অভাবে চুল পড়তে শুরু করে এবং চুলে ডগা ভাঙ্গতে থাকে।
উৎসঃ
টক জাতীয় ফল যেগুলোকে আমরা সাইট্রাস ফ্রুট বলে থাকি। যেমনঃ আমলকি, লেবু, পেয়ারা, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি।
আরো দেখুনঃ রোগা হয়ে যাওয়া বা কৃশতা থেকে পরিত্রাণের উপায় জানুন
আমাদের কাছেই পাওয়া যায় লেবু। প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবু, মধু মিশিয়ে খেলে খুব উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া চুলের জন্য যেকোন প্যাক বানাতে লেবু ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া চুলের যেকোন তেলে ও লেবু মিসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। লেবু ছাড়াও বিভিন্ন টক ফল খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়।

৪. ভিটামিন ‘ডি’
ভিটামিন ডি এর অভাবে এলোপেশিয়া হয়। এলোপেশিয়া মানে চুল খুব বেশি পরিমানে পড়া, মাথা প্রায় টাক হয়ে যাওয়া। ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে চুল কম পড়ে। অন্যদিকে ভিটামিন ডি আবার হেয়ার ফলিকল বাড়ায় তাই নতুন চুল গজাতে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে।
উৎসঃ
ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস হচ্ছে সকালের রোদ। কিন্তু গরমের দিনে রোদে খুব বেশি সময় বসে থাকা যাবে না। শীতকালের সকালের রোদ ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস। এছাড়া ও মাছ, ডিম, লিভার, মাশরুম ইত্যাদি ভিতামিন ডি এর ভালো উৎস।
আরো পড়ুনঃ খুশকি দূর করার উপায়
ব্যবহার
ভিটামিন সি এর মতোই ভিটামিন ডি ও খাওয়া ভালো। তাই যেকোন ধরনের মাছ, ডিম পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। এছাড়া ও কড লিভার ওয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. ভিটামিন ‘ই’
ভিটামিন ই চুলের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। যাদের খুব বেশি পরিমাণে চুল পড়ে তাদের ভিটামিন ই ক্যাপসুল বা সরাসরি ভিটামিন ই খেলে খুব ভালো কাজ করে। চুল পড়া কমে, নতুন চুল গজায় এবং সাথে সাথে চুলের বৃদ্ধি হয়।
উৎসঃ
যেকোন ফল, সবজি বিশেষ করে পালং শাক, আমন্ড, এভকেডো ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল এর উপকারিতা বা অপকারিতা।
ব্যবহার
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এসব খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন ই ক্যাপসুল যেকোন ওয়েল বা হেয়ার প্যাকের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
ভিটামিন আমাদের চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার থাকে।
আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালে ত্বকের পরিচর্যার জন্যে যেসব উপকরণগুলি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে
6 Comments