
গ্রীষ্মের সময়ে আমের আচার, বর্ষায় জলপাইয়ের আচার। আচারের নাম শুনলেই আমাদের সবার মুখে জল চলে আসে। আমাদের খাবারের রুচি বাড়াতে আচারের কোন তুলনা নেই। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আম, বরই, জলপাই, চালতার আচার তৈরী করা হয়। আবার যারা একটু বেশি আচার পছন্দ করে তারা লেবু, মরিচ, সাতকড়া, তেতুলসহ অনেক আচার তৈরী করে থাকে।
যদিও বর্তমানে আচার তৈরী খুব একটা কেউ করতে চায় না, তবুও মৌসুম এলে টুকটাক আচার তৈরী করে সবাই। আচার যেন আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখে। আচার বানিয়ে বিক্রি করা আবার অনেকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করছে। অনেকেই মৌসুমি উপকরণ দিয়ে আচার তৈরি করে সারা বছর সংরক্ষণ করে। আচার তৈরী করার চেয়ে আচার সংরক্ষণ করা বেশি ঝামেলার।
আচার সংরক্ষণ করা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। বাজার থেকে কেনা আচারে বিপুল পরিমানে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে। এসব উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ। এগুলো ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এসব উপাদান যেহেতু ক্ষতিকারক তাই এসব উপাদান ছাড়া কিভাবে আচার দীর্ঘদিন যাবত সংরক্ষণ করা যায় দেখে নেওয়া যাক-
দীর্ঘদিন আচার ঘরে থাকলে ফাঙ্গাস পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টক জাতীয় ফলমূলে পানি বা বাতাসের উপস্থিতিতে ঈস্ট বা ছত্রাক জন্মায়। ফলে এসব খাবারের স্বাভাবিক স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়। দেশীয় টক জাতীয় ফল সংরক্ষণ করা হয় মোরব্বা বানিয়ে বা টক মিষ্টি ঝাল আচার বানিয়ে।
আচারে ফাঙ্গাস পড়ার একটি কারণ হচ্ছে পানি। আমরা পানির কথা শুনেই ভাববো আচারে আবার পানি আসলো কই থেকে। আসলে আমরা যখন সরিষা থেকে সরিষার তেল সংগ্রহ করি তখন তাতে পানি ব্যবহার করা হয় যা পরবর্তীতে ফিল্টার করার পরেও কিছুটা পানি থেকে যায়। তাই আচারকে ফাঙ্গাস থেকে রক্ষা করতে চাইলে আচারে তেল দেওয়ার আগে তেল কড়াইতে জ্বাল করে নেওয়া উচিত।
এখন দেখে নেওয়া যাক আচারকে কিভাবে ফাঙ্গাস থেকে দূরে রাখা যায়-
১। যে পাত্রে আচার সংরক্ষণ করা হবে সেই পাত্রটি আগেই ভালোভাবে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। তাহলে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে।
২। আচার সংরক্ষণের জন্য কাচের বয়াম ব্যবহার করা উচিত। সংরক্ষণের পূর্বে বয়ামের নিচে সামান্য লবণ ছিটিয়ে নিতে হবে। প্লাস্টিকের পাত্রে আচার রাখলে আচার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
৩। যে পাত্রে আচার রাখা হবে তা আগেই ভালো মতো ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
৪। আচার ভালো রাখার জন্য বেশি করে তেল ব্যবহার করতে হবে। আচারের উপরে তেল ভাসিয়ে রাখতে হবে। তেল আচারে বাতাস ঢুকতে বাধা প্রদান করে। এতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকতে পারে না। আচারে যদি তেল কম হয় তাহলে পরে তেল গরম করে আচারে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
৫। ডুবো তেলে ডোবানো আচারের বয়ামগুলো মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে। আবার চাইলে নরমাল ফ্রিজে রেখেও সংরক্ষণ করা যায়।
৬। টক বা ঝাল আচারে ছত্রাকের আবরণ পড়লে তা তুলে ফেলে দিতে হয়। তার উপরে চিনি ছড়িয়ে দিতে হয়।
৭। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা করে আচার সূর্যের আলোয় রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
৮। আচারে প্রিজারভেটিভ হিসাবে লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি গন্ধ ধরে রাখতে সাহায্য করে। আচারের স্বাদ বৃদ্ধি করে। সঠিক মাত্রায় আচার ব্যবহার না করলে আচারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধতে পারে। ফলে আচার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৯। মেথি পাউডার, হলুদ, হিং খুব ভালো প্রিজারভেটিভ হিসাবে কাজ করে। সোডিয়াম বেনজোয়েট এসিড ও সোডিয়াম বেনজোয়েট দিলে আচার অনেকদিন ভালো থাকে। লবণ, চিনি, ভিনেগার ও মশলা দিয়ে আচার তৈরী করলে আচার অনেক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
১০। আচারে পানি ব্যবহার করা যাবে না। পানি ব্যবহার করলে আচার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
১১। আচার কখনোই হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করা যাবে না। সবসময় চামচ দিয়ে আচার নাড়তে হবে। আচার বয়াম থেকে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে চামচে যেন পানি না থাকে।
১২। চুনের পানি, ফিটকিরিতে আম ভিজিয়ে রেখে আচার বানালে আম কখনো ভেঙ্গে যায় না।
১৩। যাদের আচার রোদে দেওয়ার জায়গা নেই তারা আচার ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন। চাটনী ও এভাবে রাখা যেতে পারে।
১৪। আচারের বয়াম সবসময় শুকনা স্থানে রাখতে হয়। আচার কখনোই স্যাতস্যাতে স্থানে রাখা যাবে না।
১৫। আচার একটু বেশি পুরনো হয়ে গেলে কিছুটা সরিষার তেল গরম করে আচারে যোগ করুন। পরে আবার আচার ঠান্ডা করে রাখুন। তাহলে আচার অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ তেলাপোকা দূর করার সহজ উপায়
গরম দুধে খেজুর মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
রান্নায় বেশি ঝাল হয়ে গেলে কিভাবে কমাবেন?
One Comment