
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ, অঙ্গ, টিস্যু পানির উপর নির্ভরশীল। সুস্থ থাকতে হলে আমাদের পানির কোন বিকল্প নেই। পানির অভাব হলেই শরীর অচল হয়ে পড়ে। আমাদের শরীরের জন্য সবসময় তাই পানি খুব বেশি প্রয়োজন।
শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি প্রবেশ না করালে খুব দ্রুতই শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। অনেকেরই অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে তখন পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। কখনো বমি বা ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। আমাদের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হয়। এর কম পানি পান করলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়।
এই পানিশূণ্যতার বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয় যেমন-
শরীরের প্রতিটি কোষ, অঙ্গ ও টিস্যু পানির ওপরই নির্ভরশীল। সুস্থ থাকতে পানির বিকল্প নেই। এ কারণে শরীরে পানির ঘাটতি হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ ও এর প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন-
১। শুষ্ক ত্বক-
শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিলে ত্বক শুষ্ক হয়ে ত্বক কুচকে যেতে পারে।
২। মাথা ধরা-
মাথা ব্যথা অনেকসময় পানিশূন্যতা থেকে দেখা দিতে পারে। আপনার যদি অনেক সময় ধরে মাথা ধরে থাকে তাহলে আপনি এক গ্লাস পানি পান করে দেখতে পারেন। নিমিষেই আপনার মাথা ব্যথা গায়েব হয়ে যাবে। পানির পাশাপাশি নিয়মিত আপনি লেবুর রস, শরবত, স্মুদি, বিভিন্ন ধরনের শেক, লাচ্ছি খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের পানিশূণ্যতা দূর হবে। ফলে মাথা ধরা কমে যাবে।
৩। মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা-
শরীরে পানি কমে গেলে বা পানিশূণ্যতা দেখা দিলে আমাদের লিভার ঠিকমতো কাজ করে না। লিভার মূলত পানির সাহায্যে গ্লাইকোজেন তৈরী করে শরীরের কাজ করার জন্য শক্তি যোগান দেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে লিভারের কাজ বিঘ্নিত হলে শরীরে অনেক বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়। তখন নোনটা, স্ন্যাক্স ও মিষ্টি, চকলেট এগুলো খেতে ইচ্ছা করে খুব বেশি।
৪। হাত পায়ে টান ধরা-
গরমের সময় ব্যায়াম করলে শরীর খুব বেশি গরম হয়ে যায়। এসময় শরীর ঠান্ডা হতে অনেক বেশি পানি প্রয়োজন হয়। কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায় তাহলে আমাদের মাংসপেশি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। তখন আমাদের হাতে পায়ে টান ধরে। তবে মাঝে মাঝে শীতের সময় কম পানি খেলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
৫। মাথা ব্যথা-
মাথা ধরা ছাড়াও পানিশূন্যতার ফলে মাথা ব্যথা হতে পারে। আমরা যখন পানি খুব কম খায় তখন আমাদের লিভার ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে আমাদের মাথা ব্যথা হতে দেখা যায়। এছাড়া মাথা ঝিমঝিম ও করতে পারে।
৬। মুখে দুর্গন্ধ-
পানিশূণ্যতার ফলে মুখে দূর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। পানি কম হলে শরীরে লালা কম হয়। ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়া অনেক বেশি তৈরী হয়। তখন মুখে দূর্গন্ধ হয়।
৭। মনোযোগের অভাব-
শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিলে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। যেহেতু মানুষের মস্তিষ্কের ৯০ ভাগই পানি দিয়ে তৈরী। তাই পানিশূণ্যতার প্রভাব অবশ্যই মস্তিষ্কের উপর ও পড়ে। ফলে মানুষের মনোযোগ কমে যেতে পারে। স্মৃতি বিস্মৃতি হতে পারে। আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে।
৮। কোষ্ঠকাঠিন্য-
শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। কিন্তু পানির অভাব হলেই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এছাড়া বুক জ্বালা পোড়া ও হজমের সমস্যাও হতে পারে।
৯। প্রসাবের রং পরিবর্তন-
পানি শূণ্যতা দেখা দিলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি আমাদের প্রসাবের রং দেখে। প্রসাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয় তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের পানিশূণ্যতা হয়েছে।
১০। ক্লান্তিভাব-
পানির অভাব হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাত করে অবসন্নতা দেখা দেয়। ঠোঁট, গলা, জিহবা শুকিয়ে আসতে থাকে।

পানিশূণ্যতা দূর করতে করণীয়-
১। পানি
পানিশূণ্যতা দূর করতে আমাদের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস করে পানি খেতে হবে। বেশি ওজন হলে বা শরীর থেকে ঘাম বেশি বের হয়ে গেলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা যায়। তাই পানিশূণ্যতা দূর করতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ১ গ্লাস পানি পান করতে হবে। সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২। দুধ বা দই
দুধ পানির অন্যতম বিকল্প। পানির চাহিদা মেটাতে দুধ বা দই খাওয়া যেতে পারে। দই আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী খাবার। দুধ ও দইতে থাকা ভিটামিন বি ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। অতএব পানিশূণ্যতা রোধ করতে পানির পরিবর্তে দুধ বা দই খাওয়া যেতে পারে।
৩। লেবুর শরবত
পানিশূণ্যতা দূর করতে লেবুর শরবত খুব কার্যকরী। একটি মাঝারি আকৃতির লেবু থেকে ৪০ মিলিগ্রাম এসকরবিক এসিড পাওয়া যায়। লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় লেবু খেলে আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব কাটে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন ১ গ্লাস করে পরিষ্কার লেবুর শরবত খেলে পানিশূণ্যতা দূর হবে। আবার লেবু সালাদ বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
৪। আপেল
আপেল একটি পানিজাতীয় ফল। আপেলে ভিটামিন সি ও ই থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি আপেল পানিশূণ্যতা রোধ করে। তাই যখন পানিশূণ্যতা দেখা দিবে তখনই একটা আপেল খেয়ে নিন।
৫। কমলালেবু
কমলালেবু রসালো ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে কমলালেবু খেতে হবে। এছাড়াও কমলালেবুতে রয়েছে ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৬। ডাব
পানিশূণ্যতা দূর করতে ডাব একটি অন্যতম খাদ্য। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৭ ক্যালোরি বা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি থাকে। এতে প্রায় ৯৬% পানি থাকে। এতে প্রচুর সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। ফলে পানিশূণ্যতা দূর হয়।
এসব খাবার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফল খেলে আমাদের শরীরের পানিশূণ্যতা দূর হবে। ভাজা পোড়া কোন ধরনের খাদ্য খাওয়া উচিত নয়। শাক সবজি ও ফলমূল খেলে পানিশূণ্যতা রোধ হবে।
আরো পড়ুনঃ
2 Comments