
পান্তা ভাত গ্রামীণ বাংলার জনগোষ্টির একটি প্রচলিত খাবার। ভাত সংরক্ষণের জন্যে তাকে জলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। এটা মূলত ভাত সংরক্ষণের গ্রামীণ একটি পদ্ধতি। পান্তা ভাত বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন – বাসি পান্তা, দই পান্তা, জিরা পান্তা। গ্রামীণ বাংলার জনগোষ্টি সাধারনত বাসি পান্তা খায়। ইদানিং পহেলা বৈশাখের মেনু হিসেবে সকালের দিকে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন হয়েছে।

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ
খাওয়ার আগে যদি আপনি পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ জানেন তবে তা আপনার জন্যে বেশ ভালো। এটি জানা থাকলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কতটুকু পান্তা ভাত খাওয়া উচিত হবে এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকতে পারবেন। তবে আপনাদের জন্যে পরামর্শ যে কেনা পান্তা খাবেন না, বাসায় তৈরী পান্তা খাবেন। কি ধরনের চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়েছে তার উপর পান্তা ভাতের ক্যালরী নির্ভর করে । বিভিন্ন চাল ভেদে ১ কাপ ভাত থেকে ২০০- ২৪২ ক্যালরী পাওয়া যায়। অনেকেই আবার পান্তা ভাতের সাথে ঘি খেয়ে থাকেন। ১ টেবিল চামচ ঘি থেকে পাওয়া যায় ১১২ ক্যালরী। দই পান্তা ও জিরা পান্তায় ক্যালরী থাকে আরও বেশি। কারণ এগুলো তৈরীতে ব্যবহার করা হয় টক দই ও তেল।
পান্তা ভাতের অন্যান্য পুষ্টিগুণ
পান্তা ভাতে রান্না করা ভাতের (steamed rice) তুলনায় আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়ামের পরিমান বেশি থাকে। অন্যদিকে পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমান কমে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া ভিটামিন -বি ২ , ভিটামিন -বি ১২ এর পরিমাণ পান্তা ভাতে অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। পান্তা ভাত দেহে পর্যাপ্ত জল পরিমাণ সরবরাহ করে দেহকে জলশুন্যতা থেকে রক্ষা করে। পান্তা ভাত তীব্র গরমে সান-স্ট্রোক বা হিট-স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। পান্তা ভাত গ্যাস্টিক রোগীর জন্যও উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটা ক্ষতিকর। তবে বয়স্কদের জন্য কিন্তু পান্তা মোটেই ভালো নয়।

রান্না করা ভাতের (steamed rice) ও পান্তার গুনাগুণে পার্থক্য
রান্না করা ভাতের (steamed rice) তুলনায় পান্তায় পুষ্টি বেশি। ভাতের তুলনায় পান্তা সহজেই হজম হয়ে যায়। ভাতের চেয়ে পান্তায় সোডিয়াম কম থাকায় আমাদের শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, তবে পান্তা ভাতের সাথে লবন বেশি নেওয়া যাবে না। ভাত পুরোটাই শর্করা (Carbohydrate)। ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে যায় এবং খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভাতে জল দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি (Fermentation) ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) বা ইস্ট (Yeast) শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে।
বর্তমানে প্রায় সবার বাড়িতে সকাল বেলা গরম গড়ম ভাত কিংবা নাস্তার প্রচলন। কিন্তু অতীতে সকাল বেলা মানেই পান্তা ভাত, বিশেষ করে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের পরিবারে। আর এই ভাতের সাথে একটু লবণ, শুকনা মরিচ ডলা বা পোড়া অথবা কাঁচা মরিচ এবং পিঁয়াজ। লেবু অথবা লেবু পাতার রস সাথে একটু আচার। এখনও গ্রামাঞ্চলে পান্তার প্রচলন রয়েছে। তবে শহরাঞ্চলে পান্তার প্রচলন নেই বললেই চলে। অথচ পান্তা ভাত পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার । প্রাচীন কালের মানুষেরা বলছেন, জীবনের যাবতীয় শক্তি পান্তায় রয়েছে। তাদের দাবি, শরীর চর্চা না করেও পান্তা ভাত খেয়ে বলিষ্ঠ শরীর অর্জন আর উজ্জ্বল ত্বক ও চুলের অধিকারী হতে পারেন যেকেউ।
সম্প্রতি আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যাল থেকে একজন গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, যে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন তৈরি হয়। যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে (steamed rice) আয়রন এর পরিমাণ থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়া ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে পটাশিয়াম এর পরিমাণ হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম এবং ক্যালশিয়ামের পরিমাণ হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম। যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে (steamed rice) ক্যালশিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। এছাড়া পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে দ্বারায় ৩০৩ মিলিগ্রাম। সেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ থাকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম।
এছাড়া পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ ও ভিটামিন-১২ এর ভালো একটা উত্স। এছাড়া দেহের বহু উপকারী ব্যকটেরিয়াও পান্তা ভাতেই তৈরি হয়।
আমেরিকা নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন-এর গবেষণা বলছে, ভাত জলে ভিজিয়ে রাখলে এমন এক উপাদান তৈরি হয় যা পাকস্থলী প্যানক্রিয়াটিক অ্যামাইলেজসহ আরও কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা অনেকগুণ বারিয়ে দেয়। ফলে পান্তা ভাতের জটিল শর্করাগুলো আমরা খুব সহজেই হজম করতে পারি। এছাড়া পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ ও ভিটামিন-১২ এর ভালো উত্স। এছাড়া দেহের জন্যে বহু উপকারী ব্যকটেরিয়াও পান্তা ভাতে তৈরি হয়।
পান্তা ভাতের কয়েকটি উপকারিতা
১. পেটের সমস্যার সমাধান।
২. কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়।
৩. শরীর সতেজ থাকে।
৪. পাশাপাশি শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫. রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকে।
৬. হার্ট সুস্থ থাকে।
আরো পড়ুনঃ