প্রাকস্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য সবচেয়ে ভালো খাদ্যব্যবস্থা
প্রাকবয়সী ছেলেমেয়েদের খাদ্যব্যবস্থা

আমাদের দেশের ১-৫ বছর বয়সের বালক বালিকাদের বৃদ্ধির হার উন্নত দেশগুলি অপেক্ষা অনেক কম। এসময় থেকেই এদের খাদ্য চাহিদার প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
পুষ্টিচাহিদাঃ
ক্যালরিঃ১-৫ বছর বয়সে ক্যালরির চাহিদা হয় প্রতি কিলোগ্রাম দৈহিক ওজনে ১০০-৮০ কিলোক্যালরি। হিসাব করে দেখা গেছে এ সময়ে ১ বছরের শিশুর দরকার হয় দৈহিক মোট ১০০০ কিলোক্যালরি এবং ৫ বছরের শিশুর ১৪৫০ কিলোক্যালরি।
আরো পড়ুনঃ গরমে পোশাক নির্বাচনে যেসব মাথায় রাখতে হবে
প্রোটিনঃ দেহ বৃদ্ধির জন্য এসময় উন্নতমানের প্রচুর প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দল এদের খাদ্যে দৈনিক ২৫-৩৯ গ্রাম প্রোটিনের সুপারিশ করেছেন। যদিও আমাদের দেশে উন্নতমানের প্রোটিন যেমনঃ দুধ, ডিম, মাংস ইত্যাদি অত্যন্ত মহার্ঘ। পরিবারের সকলের জন্য ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলেও এই বয়সের বাড়ন্ত শিশুর জন্য সাধ্যমতো ডিম ও দুধের ব্যবস্থা করা উচিত। যদি একান্তই সম্ভব না হয় তবে অপেক্ষাকৃত সুলভ প্রোটিন খাদ্য যেমন ডাল, শিমের বীচি, মটর, ছোলা, চীনাবাদাম, ছোট মাছ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। ২ বা ৩ টি খাদ্য এমনভাবে মিশ্রিত করা যায় যাতে করে প্রোটিনের মান উন্নত হয়। এমনি কয়েকটি মিশ্রণের উল্লেখ করা হলোঃ
চাল ডাল | আটা বা সুজি দুধ | চীনাবাদামের ছাতু গুড় আটা | মুড়ি বাদাম |
ক্যালসিয়ামঃ অস্থি গঠনে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী। যুক্তরাষ্ট্রে এ বয়সের শিশুদের যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণের অনুমোদন আছে, তার পরিমাণ ০.৭-০.৮ গ্রাম। আমাদের দেশে সুপারিশমালায় এর পরিমাণ ০.৫-০.৬ গ্রাম।
লোহাঃ রক্ত গঠনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোহার চাহিদাও একসময় বৃদ্ধি পায়। দৈনিক ১০ মিলিগ্রআম লোহা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ডাল, বাদাম, ডিম, কলিজা ইত্যাদি লোহার উৎকৃষ্ট উৎস।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিসে আক্রান্ত হলে খাদ্যব্যবস্থা জেনে নিতে পারেন
ভিটামিন এঃ প্রাকস্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের দৈনিক ২৫০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল প্রয়োজন। বাংলাদেশর পুষ্টিজরিপে দেখা গেছে যে ভিটামিন এ এর অভাবে এদেশের হাজার হাজার শিশু চোখের রোগে ভোগে। কলিজা, মাখন,ডিম ইত্যাদি ভিটামিন-এ এর উতকৃষ্ট উৎস। এছাড়া সবুজ শাকসবজি ও রঙ্গিন ফল প্রতিদিনকার আহার্যের তালিকাভুক্ত করলে ভিটামিন-এ র চাহিদা পূর্ণ হবে।
বাংলাদেশের জরিপে দেখা গেছে যে এ বয়সের শিশুরা মারাত্নকভাবে পুষ্টিহীনতার শিকার। এর কারণ এদের খাদ্যে ক্যালরি, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাব। বিশেষ করে ভিটামিন-এ, রাইফ্লোবিন, ফলিক এসিড ও লোহার মারাত্নক অভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রোটিন- ক্যালরির পুষ্টিহীনতা দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে বিশেষভাবে প্রকট। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের সামর্থ অনু্যায়ী দুই প্রকারের খাদ্য পরিকল্পনা করা যায়।
১-৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য সুষম খাদ্য
খাদ্যবস্তু (গ্রাম ) | অধিক খরচে | কম খরচে |
খাদ্যশস্য ( চাল, আটা ) | ১০০-১৪০ | ১৫০-২০০ |
ডাল | ২০-৩০ | ৪০-৫০ |
সবুজ শাক | ৫০-৭৫ | ৫০-৭৫ |
অন্যান্য সবজি | ৩০ | ৩০-৫০ |
ফল | ১০০ | ৫০ |
দুধ | ৪০০ | ২০০ |
মাছ মাংস ডিম | ৪০-৫০ | ৩০ |
তেল-ঘি | ২০-২৫ | ২০-২৫ |
চিনি-গুড় | ৩০-৪০ | ৩০-৪০ |
এই বয়সের ছেলেমেয়েদের পেট ছোট, বেশি খাদ্য একসাথে খেতে পারে না। তাই দিনে ৫ বার খাওয়ার মাধ্যমে উপরোক্ত পুষ্টি উপাদানগুলি সরবারহ করতে হবে। এরা অনেক সময় খেলাধুলা বা অন্য কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে খাওয়ার কথা ভুলে যায় এবং খেতে খেতে হঠাত খেলতে চলে যায় অথবা খাওয়ার সময় ঘুমিয়ে পড়ে ফলে অভুক্ত থাকে। এসব দিকে লক্ষ্য রেখে ধৈর্য্যের সাথে শিশুর সুবিধা অনুযায়ী খাওয়ার নিয়ম পালটিয়ে নিতে হবে। মাছ-মাঙ্গস,ডিম ও দুধের বরাদ্দটুকু খেতে যেন ভুল না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। খাদ্যবস্তুকে সহজপাচ্য ও মুখরোচক করে প্রস্তুত করাতে হবে এবং তা আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করতে হবে। গল্প বলে হোক অথবা অন্য উপায়ে হোক বরাদ্দ খাড্যবস্তুগুলি যেন সে গ্রহণ করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে, নইলে এদের যথাযথ বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
আরো দেখুনঃ লিভার সিরোসিসের খাদ্যব্যবস্থা জেনে নিন
3 Comments