প্রেসার কুকারে রান্না করার সময় সতর্কতা এবং যেসব খাবার প্রেসার কুকারে রান্না করা উচিত নয়
প্রেসার কুকারে রান্নার সময় সতর্কতা

প্রেসার কুকারের রান্না কি আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী?
আজকাল ব্যস্ত দিনে সময় বাচাতে অনেকেই প্রেসার কুকার ব্যবহার করে থাকে। প্রেসার কুকার ব্যবহারের সময় মাথায় কিছু বিষয় রাখা উচিত। এগুলো না মনে রাখলে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
আবার প্রেসার কুকারে সব খাবার রান্না করা উচিত নয়। ডাল বা যেসব খাবার উপচে উপরে উঠে যায়, সেসব খাবার প্রেসার কুকারে রান্না করতে চাইলে অল্প পরিমাণে করতে হবে। এসব খাবার বেশি পরিমাণে করতে চাইলে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। প্রেসার কুকারে সব ধরনের খাবার রান্না করা যায় না। যেসব খাবার প্রেসার কুকারে রান্না করা যায় সেসব খাবার সম্পর্কেও আমরা আজ জানবো এবং প্রেসার কুকারে রান্না করা খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা নিরাপদ তাও আমরা জানবো। হার্ট অ্যাটাকের আগে কিভাবে বুঝবেন?
চলুন প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক প্রেসার কুকারে রান্নার সময় আমরা কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি-
১। প্রেসার কুকারে রান্নার ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে কুকারটি যেন নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। কুকারের কোথাও কোন ফাটল ধরলে তা ভালোমতো লক্ষ্য করতে হবে।
২। প্রেসার কুকারে রান্নার সময় একটি বিষয় খুবই জরুরী। কুকারের ঢাকনা ঠিকমতো আটকানো আছে কিনা। তাছাড়া রান্নার শেষে কুকারে বাষ্প থালা অবস্থায় ঢাকনা খোলা যাবে না। তাহলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাষ্প পুরোপুরিভাবে বের হলেই তবে ঢাকনা খুলতে হবে।
৩। রান্না করার আগে এবং রান্না করার পরে উভয় সময়েই পরীক্ষা করে নিতে হবে প্রেসার কুকার ঠিকমতো পরিষ্কার আছে কিনা। সিটি উঠার জায়গাটি পরিষ্কার কিনা।
৪। চুলা বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রেসার কুকার ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। তারপর বাষ্প বেরিয়ে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। ঢাকনার উপরে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে হবে। তারপর ঢাকনা খুলে দিতে হবে। তাহলে কোন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না।
৫। প্রেসার কুকারে রান্না করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি থেকেই বাষ্প তৈরী হয়ে কুকারে রান্না হয়। তাই প্রেসার কুকারে রান্না করতে গেলে পানির বিষয়ে নজর দিতে হবে। সকালের নাস্তায় রুটি খাওয়া কতটা স্বাস্থসম্মত?
যেসব খাবার প্রেসার কুকারে রান্না করা উচিত নয়ঃ
১। দুধঃ প্রেসার কুকারে কখনো দুধ জ্বাল করা উচিত নয়। কারণ দুধ ফুটতে শুরু করলেই উপরে উপচে উঠে। তাই প্রেসার কুকারে দুধ, পায়েস, ফিরনী, সেমাই রান্না করা উচিত নয়। তাহলে প্রেসার কুকার ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারে। বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে চাইলে প্রেসার কুকারে কখনো দুধ বা দুধের তৈরী কোন খাবার রান্না করা যাবে না।
২। মাছঃ মাছ রান্না করতে খুবই কম সময় লাগে। আবার মাছ বেশি সময় ধরে রান্না করলে মাছের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। মাছ বেশিক্ষণ রান্না করলে মাছ সহজেই ভেঙ্গে যায়। আবার মাছের তরকারির স্বাদ ও নষ্ট হয়ে যায়। তাই মাছ প্রেসার কুকারে রান্না করা উচিত নয়।
৩। সবজি ও ফলঃ ফল ও শাক-সবজি বেশি সময় রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ চলে যায়। প্রেসার কুকারে এসব খাবার রান্না করলে এগুলোর ভিটামিন, মিনারেলস ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়। ফলে প্রেসার কুকারে এসব রান্না করা উচিত নয়।
৪। ডিম সিদ্ধঃ প্রেসার কুকারে ডিম সিদ্ধ করতে চাইলে বড় কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই হাড়িতেই ডিম সিদ্ধ করে নেওয়া উচিত। খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর
এবার জেনে নেওয়া যাক প্রেসার কুকারের রান্না করা খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মতঃ
প্রেসার কুকারে খাবার রান্না করলে লেকটিনের মাত্রা কমে যায়। এই লেক্টিন আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এটি একটি রাসায়নিক উপাদান। এটি খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। তাই বিবেচনা করলে দেখা যায় প্রেসার কুকারের রান্না করা খাবার খাওয়া খুবই ভালো।
আবার অধিকাংশ প্রেসার কুকার দেখা যায় অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী। যখন প্রেসার কুকার অধিক গরম হয়ে যায় তখন অ্যালুমিনিয়ামের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেক প্রেসার কুকার এখন অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা তৈরী করা হয় না। লোহা ও মিশ্র ধাতু দ্বারা তৈরী করা হয়। ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ অব্যাহত থাকে।
প্রেসার কুকারে মাংস রান্না করলে খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। আবার প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করলে তাতে পানি বসে যায়। ফলে ভাত বেশি ভারী হয় যায়। তাই প্রেসার কুকারের ভাত রান্না খেতে হয় না। তাহলে মানুষ তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যায়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রেসার কুকারে রান্না করা খাবারের পুষ্টিগুণ ধবংস হয়ে যায় এমনটা নয়। তবে প্রেসার কুকারে রান্না করলে সময় ও শ্রম বাচে এবং জ্বালানি কম খরচ হয়।
আরো পড়ুনঃ প্লাস্টিকের বোতল বারবার ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ব্যায়ামের বিকল্প হতে পারে কোন ঘরের কাজ?
2 Comments