
বাঙ্গালির রন্ধন শৈলী হচ্ছে একটি শৈলী যা ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে বঙ্গে উৎপত্তি লাভ করে। প্রাচীন বঙ্গ অঞ্চল বর্তমান বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক ভ্যালিতে বিভক্ত। এই পূর্বাঞ্চলের প্রধান খাদ্য মূলত মাছ আর ভাত। তাই তো আমাদেরকে মাছে –ভাতে বাঙালি বলা হয়। তবে এই মাছ ভাতের সাথে ডাল, মাংস, শাকসবজি তো থাকেই। তাই মাছ ভাতের সাথে ডাল, মাংস, শাকসবজি প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের খাদ্যে মিশে আছে।
বাঙ্গালির এসব ভোজন-পটুতা ও খাদ্য-রসিকতার পরিচয় প্রাচীন বাংলা সাহিত্যেও আমরা দেখতে পাই। বাঙ্গালিকে সেই প্রাচীন কাল থেকেই খাদ্য রসিক নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দীতে নৈষধ চরিত, বৌদ্ধ সহজীয়া গান চর্যাপদ বাঙ্গালীর রন্ধনশৈলীর কিছু কিছু বিবরণ রয়েছে।
ভোজন রসিক বাঙ্গালীর খাবার সম্পর্কে জানতে পড়ুনঃ ভোজন রসিকদের জন্যে কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলো
ময়মনসিংহের দ্বিজ বঙ্গশীদাস তার মনসামঙ্গলে লিখেছেন,-
“নিরামিষ রান্ধে সব ঘৃত সম্ভারিয়া
মেস্যর ব্যঞ্জন রান্ধে তৈল পাক দিয়া
বড় বড় কই মৎস্য, ঘন ঘন আঞ্জি
জিরা লং মাখিয়া তুলিল তৈলে ভাজি…..।“
চতন্যচরিতামৃতের লেখক কৃষ্ণদাস কবিরাজ শ্রীক্ষেত্রে সার্বভৌম ভট্টাচার্যের বাড়িতে চৈতন্যদেবের নিরামিষ আহারের যে বিবরণ দিয়েছেন-
“বর্তিসা কলার এল আংগেটিয়া পাত,
ঊন্ডারিত তিন মান তন্ডুলের ভাত।
পীত সুগন্ধি ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল,
চারিদিকে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল….।“
বাঙ্গালি খাবারের একটি বিশাল সম্ভার রয়েছে। বাঙ্গালিরা কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে আত্নীয়স্বজনদের জন্য বিভিন্ন পানীয়, মিষ্টি, পিঠা, আচার ইত্যাদি তৈরী করে থাকে।
বাঙ্গালিদের রন্ধনশৈলী মূলত দুই প্রকার।
নিরামিষ
আমিষ

পোলাও এর রেসিপি জানতে পড়ুনঃ মজাদার খাবার মটর পোলাও! আসুন জেনে নেই রন্ধন প্রণালী
বাঙালি হিন্দু বিধবারা সাধারণত নিরামিষ খাবার খেয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন পালা পার্বণেও নিরামিষ খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। বাঙ্গালিদের রান্নায় সাধারণত তেল, ঝাল, মশলা, লবণ বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাঙ্গালিদের খাবারে বিদেশিদের মতো সিদ্ধ, কাঁচা খাবারের প্রভাব কম দেখা যায়। বাঙ্গালিরা তেল-মশলাযুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকে। বাঙ্গালিরা রান্নায় দুইধরনের তেল বেশি ব্যবহার করে থাকে। সরিষার তেল, সয়াবিন তেল। মশলার মদ্ধে আদা, রসুন, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, পিয়াজ, জিরা,সরিষা, ধনিয়া, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাঙ্গালিদের দৈনন্দিন আহারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাল, ভাত, ভাজা, মাছ, ভর্তা, শুটকি মিষ্টি পিঠা, সেমাই ইত্যাদি ।
বাঙ্গালিদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। ভাত তৈরী হয় চাল থেকে। চাল সিদ্ধ করে ভাত রান্না করা হয়।
বাঙ্গালিরা সাধারণত মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। রসগোল্লা, সন্দেশ, পানতোয়া, চমচম, ক্ষীর, লাড্ডু, নাড়ু, সেমাই, গজা, পায়েস ইত্যাদি।এছাড়াও বাঙ্গালির খাদ্যের মধ্যে আখের রস, শরবত, মালাই, চা, লাচ্ছি, ফালুদা, বোরহানি প্রচলিত আছে।
বাঙ্গালিদের রন্ধনশৈলী সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। যেগুলো পাঠ করে আমরা বিভিন্ন রন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। তবে প্রায় বইয়েতেই রেসিপি বেশি লেখা থাকে।
- বিশ্বেশ্বর তর্কালঙ্কার ভট্টাচার্যের পাক রাজ্যেশ্বর বইটিকে বাঙ্গলা ভাষায় আদি রেসিপির বই বলা হয়।
- প্রঙাসুন্দরী দেবীর আমিষ ও নিরামিষ আহার বইটি বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ রান্না বিষয়ক বই।
- বাংলার খাবার বইটি লিখেছেন প্রণব রায়।
- পাক প্রণালী-বিপ্রদাস মুখোপাধ্যা
- বাঙ্গলাদেশী পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবিরের রান্না বিষয়ক বই রয়েছে ।
এসব বই থেকে আমরা বাংলার রন্ধনশৈলী সমন্ধে জানতে পারি।
এছাড়াও ডিসকভারি চ্যানেল থেকে ট্রাভেল এন্ড লিভিং এর ভারতীয় চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বাংলার বিভিন্ন খাদ্য।
আরো পড়ুনঃ
চকলেট খাচ্ছেন? না কি খাচ্ছেন না? জানুন চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
3 Comments