
মিষ্টি কুমড়ার ইংরেজি নাম sweet gourd বা pumpkin যার বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata। এটি অনেক অনেক অঞ্চলে মিষ্টি লাউ নামেও পরিচিত। মিষ্টি কুমড়া গাছের উতপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার উওরাংশ।
মিষ্টি কুমড়া সাধারণত চরাঞ্চলের পলি মাটিতে ভালো হয়। জৈব পর্দাথ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটিতে মিষ্টি কুমড়া ভালো চাষ হয়। বাসা বাড়ির ছাদেও অনেকে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে থাকে।
মিষ্টি কুমড়ার আকার পেট্মোটা নাদুস নুদুস দেখতে। তবে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া লম্বাটেও হয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া কাচা অবস্থায় সবুজ দেখতে ও পাকলে দেখতে কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। এটি তরকারী খাওয়া হয়। মিষ্টি কুমড়া ভাজি, ভর্তা করেও খাওয়া যায়। তবে অনেক দেশে ডের্জাট, স্যুপ ও সালাদ হিসাবেও খেয়ে থাকে। এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। এটি বারো মাসই পাওয়া যায়।
সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন মিষ্টি কুমড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এতে ভিটামিন-এ, বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি এবং ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিংক, ফসফরাস, কপার, ক্যারোটিনয়েডস এবং অন্যান্য এন্টিওক্সিডেন্ট সমূহ। এতে বিটা ক্যারোটিন থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়াতে যেসব পুষ্টিউপাদান থাকে-
- খাদ্যশক্তি- ২৬ কিলোক্যালরি
- আমিষ- ১ গ্রাম
- শর্করা- ৫ গ্রাম
- ফাইবার- ০.৫ গ্রাম
- চর্বি- ০.১ গ্রাম
- ভিটামিন এ- ৭২০০ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন সি- ৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম- ৩৪০ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম- ২৪ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- ১ মিলিগ্রাম
- কোলেস্টেরল- ০ মিলিগ্রাম
- লৌহ- ০.৮ মিলিগ্রাম
- জিংক- ০. ৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস- ৪৪ মিলিগ্রাম

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি কুমড়ার গুণাগুণ/ উপকারিতাঃ
১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে-
মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যাশ থাকে। ফলে এটি হজম করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২। চোখ সুস্থ রাখে-
চোখ আমাদের অতি মূল্যবান বস্তু। চোখের জ্যোতি ধরে রাখতে মিষ্টি কুমড়া খুব ভালো কাজ করে। মিষ্টি কুমড়াতে বিটা ক্যারোটিন থাকে যা আমাদের চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনেয়ড চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। চোখকে সুস্থ রাখতে তাই মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উচিত।
৩। বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না-
মিষ্টি কুমড়াতে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড থাকে। জিংক আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করে। এটি আমাদের বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
৪। ওজন কমায়–
মিষ্টি কুমড়াতে খুব কম ক্যালরি থাকে। এটি খাদ্য আশ সমৃদ্ধ খাদ্য। তাই এটি ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে। যাদের ওজন কমাতে হবে তারা নিসন্দেহে মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়-
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া। মিষ্টি কুমড়াতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই থাকে। এটি আমাদের শরীরের ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়াতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
৬। হজমে সাহায্য করে-
মিষ্টি কুমরাতে প্রচুর আশ থাকায় এটি আমাদের খাদ্য খুব সহজেই হজম করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়া খুব ভালো কাজ করে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ও পরিপাক নালীর খাদ্য সরবরাহ করতে মিষ্টি কুমড়া খুব ভালো কাজ করে।
৭। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে-
উচ্চ রক্তচাপ জন্নিত সমস্যাতে মিষ্টি কুমড়া খুব ভালো কাজ করে। মিষ্টি কুমড়াতে পটাশিয়া, তাহকে যা শরীরের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ভিটামিন সি ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৮। ত্বক উজ্জ্বল করে-
মিষ্টি কুমড়াতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বক ও চুল সুন্দর করে। তাই চুল ও ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে করতে মিষ্টি কুমড়ার কোন জুরি নেই।
৯। গর্ভবতীর রক্তস্বল্পতা দূর করে-
মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজ গর্ভবতীর রক্তস্বল্পতা রোধ করে ও অকালে প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই আগামী শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
১০। ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে-
মিষ্টি কুমড়াতে অধিক বিটা ক্যারোটিন থাকে । বিভিন্ন দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে যেসব ক্যামিকেল ও ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেগুলোর জন্য ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। মিষ্টি কুমড়ার ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।
মিষ্টি কুমড়া কিডনি,লিভার, হার্ট সুস্থ সবল রাখে। কোলেস্টেরলে মাত্রা ঠিক রাখে। বাতের ব্যাথা দূর করে।
আরো পড়ুনঃ
3 Comments