রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ তোলা কেন জরুরী?
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেকআপ রিমুভ করার উপকারিতা

সারাদিন বিভিন্ন কাজ, অনুষ্ঠান, পার্টি করার পরে রাতে বাসায় এসে মেকআপ তোলা একটি খুবই কষ্টকর বিষয়। কিন্তু এই কষ্টকর কাজটি ঝামেলার হলেও এটা হতে পারে খুবই ভালো একটা অভ্যাস। এটি আপনার ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এই কাজটি করলে আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক বা না পাক, এটি আপনার ত্বকের জন্য খুবই ভালো।
চলুন দেখে নিই রাতে মেকআপ তুলে ঘুমাতে গেলে ত্বকের কি ধরনের উপকার হতে পারে?
১। প্রি ম্যাচিউর এজিং রোধ হয়-
মেকআপ প্রোডাক্টে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। এগুলো যদি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হয় তাহলে স্কিনে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। যেমন- স্কিনের পোরস বন্ধ হয়ে এজিং এর সাইন দেখা দিতে পারে। ঘুমানোর আগে স্কিন ভালো মতো ক্লিন করে নিলে সারা রাত শরীরে নতুন নতুন সেল তৈরী হয়। যা এন্টি এজিং হিসাবে কাজ করে।
২। স্কিন ক্লিন ও অক্সিজেনেটেড রাখে-
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে মেকআপ পরিষ্কার করার মানে হচ্ছে ত্বক ভালো থাকবে। ত্বক খারাপ হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষা পাবে। মেকআপ তোলা মানে স্কিন সম্পূর্ণভাবে ক্লিন করা ও অক্সিজেনেটেড করা। মুখ ভালো মতো পরিষ্কার না করলে সেলুলার অক্সিজেনেশন প্রসেস বাধাপ্রাপ্ত হয়। খালি চোখে দেখলে ভালো মতো বোঝা যায় না। কিন্তু এটি আস্তে আস্তে ত্বকের অনেক ক্ষতি করে থাকে। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্কিন ভালো মতো পরিষ্কার করা উচিত।
৩। ডার্ক সার্কেল প্রতিরোধ করে-
চোখ সাজাতে আই মেকআপ ব্যবহার করা হয়, সেই মেকআপ চোখের ডার্কসার্কেল বাড়াতে সাহায্য করে। রাতে আই মেকআপ ভালো মতো পরিষ্কার করে ঘুমালে ডার্ক সার্কেল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। হাতে কিছুটা সময় নিয়ে ভালো মতো মাসকারা, আই লাইনার তুলে নেওয়া উচিত। তাহলে দেখতে অনেক ইয়াং লাগবে। চোখ থাকবে প্রাণবন্ত।
৪। ব্রণ দূর করে-
ত্বকে ব্রণ থাকলে কেউই দেখতে পছন্দ করে না। ব্রণ হলে আমরা দোষ দিতে থাকি নামী দামী মেকআপ প্রডাক্টের। কিন্তু আমরা কখনোই ভাবি না রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমরা ভালো মতো মেকআপ রিমুভ করেছিলাম কিনা। মেকআপ ভালো ভাবে রিমুভ করলে মুখে কোন ধরনের ব্রণ হতে পারে না। রাতে মুখ ভালো মতো পরিষ্কার না করলেই মখে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। মেকআপ স্কিনের সকল খুত ঢেকে রাখে তবুও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে মেকআপ তুলে নেওয়া উচিত। ত্বকের যেকোন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ফেসিয়াল ক্লেনজিং। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যত সুন্দর করে স্কিন ক্লিন করবেন তত ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৫। রিংকেল পড়ার সম্ভাবনা কমায়-
মেকআপ না তুলে ঘুমাতে গেলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমতে থাকে। ফলে সেল রিজেনারেট কমে যায়। তাহলে খুব দ্রুতই ত্বকে রিংকেলস পড়তে দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেকআপ ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে তুলে নেওয়া উচিত। ঘুম থেকে উঠলেই ত্বকের সফটনেস বোঝা যাবে।
৬। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়-
ত্বকের মেকআপ তুলে ফেললে ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন ও পুষ্টি প্রবেশ করতে পারে। পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মেকআপ নিয়মিত ভালোভাবে না তুললে নিজের কাছেই নিজের ত্বক খুব মলিন লাগবে। ত্বক ধীরে ধীরে ডিহাইড্রেট হয়ে যাবে।
৭। চোখে ইনফেকশন থেকে রক্ষা-
চোখে ভারী মেকআপ করার ট্রেন্ড এখন খুব বেশি। স্মোকি বা কালারফুল আই শ্যাডো দিয়ে চোখে সাজানো হয় বর্তমানে খুব বেশি। মেকআপ করার পর চোখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে চোখে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশি। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে চোখের মেকআপ তুলে নেওয়া উচিত। মাশকারা থেকে শুরু করে আই শ্যাডো সবই ঠিকমতো তুলে নেওয়া উচিত। এগুলোর কোনটির অংশ যদি চোখের ভিতরে ঢুকে যায় তাহলে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, চোখে ইরিটেশন হতে পারে। খুব বেশি হলে চোখে ইনফেকশন ও হতে পারে। তাই চোখের মেকআপ খুব ভালো মতো তুলে নেওয়া উচিত। তাহলে চোখে কোন ধরনের কোন ইনফেকশন দেখা দিবে না।
৮। দূর্বল ও ভঙ্গুর আইওল্যাশের সম্ভাবনা কমে যায়-
চোখ সাজাতে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় মাশকারা। সাজগোজের জন্য মানুষ মাশকারা ব্যবহার করে এটা স্বাভাবিক। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এই মাশকারা যখন ভালো মতো পরিষ্কার না করা হয় তখন চোখের হেয়ার ফলিকল দূর্বল হয়ে যায়। ডিহাইড্রেশন বেড়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে পাপড়ি দূর্বল হয়ে যায়। পাপড়ি পড়তে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে পৌছানোর আগেই চোখের মেকআপ ভালোমতো পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
৯। স্কিন এলার্জি দূর করে-
দীর্ঘ সময় মেকআপ ব্যবহার করার ফলে স্কিনে এলার্জি হতে পারে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক ভালো মতো পরিষ্কার করে নিলে স্কিন এলার্জি হয় না। একজিমার সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
১০। ঠোটের কোমলতা বৃদ্ধি পায়-
মুখের ত্বকের চেয়ে ঠোটের ত্বক বেশি কোমল হয়। ঠোট কোমল ও ডিহাইড্রেট রাখতে ঠোটের কিছুটা বাড়তি যত্ন নিতে হয়। লিপিস্টিক যদি ভালো মতো রিমুভ না করা হয় তাহলে ঠোট তার ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলে। ঠোট শুষ্ক হয়ে যায়, ঠোটের চামড়া উঠে যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাই অবশ্যই লিপিস্টিক তুলে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। তাহলে ঠোট অনে বেশি ময়েশ্চার ও কোমল থাকবে।
১১। পরের দিনের রুটিন সহজ হবে-
আগের রাতে যদি ফেসিয়াল কেয়ার ভালো মতো করা হয় তাহলে পরের দিনের বিউটি রুটিন খুব সহজ হবে। ঘুম থেকে উঠে যদি ফ্রেশ ত্বক পাওয়া যায় তাহলে পরের দিনের মেকআপ খুব সুন্দরভাবে শুরু করা যায়।
এতোসব উপাকারিতা দেখে এখন থেকে অবশ্যই আপনার অভ্যাস বদলে নিবেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেকআপ ভালো মতো রিমুভ করে নিবেন।
আরো পড়ুনঃ