
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চুলের সাজসজ্জায় এসেছে নানা বৈচিত্র্য। অনেকেই নানা ধরনের স্টাইলিশ হেয়ার কাট করছেন আবার কেউবা চুলের রঙয়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের চেহারায় আনছেন পরিবর্তন। বর্তমানে ছোট চুলের ট্রেন্ড চললেও লম্বা চুল সবসময়ের জন্যই সুন্দর।
কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল অনেক মেয়েরই স্বপ্ন থাকে। কিন্তু চুল বেশি লম্বা করার আগেই চুলের আগা ফেটে যায়। চুল লালচে রং ধারণ করে। আবার কখনো চুলের স্বাস্থ্য ও খারাপ হয়ে যায়। লম্বা, ঘন ও কালো চুল পেতে ঘরোয়া উপায়েই কিছু টিপস ফলো করতে হবে।
চুল বড় হলেই আগা ফেটে যায় কেন?
এই চুলের আগা ফাটার সমস্যা অনেকেরই দেখা যায়। লম্বা চুল রাখতে চাইলেই প্রায় সবার চুলের আগা ফেটে যায়। এই অভিযোগ প্রায় সবারই থেকে থাকে। চুলের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমেই নজর দিতে হবে সবার ডায়েট চার্টের প্রতি। চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে তাহলেই চুল লম্বা, কালো, ঘন ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কারণ আমাদের শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে তারপর পুষ্টিউপাদানগুলো চুল ও নখে পৌছে। তাই চুলকে সুন্দর করতে চাইলে ডায়েট চার্টের প্রতি নজর দিতে হবে।
ডায়েট চার্ট ছাড়াও চুলের ড্যামেজের পিছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
১। কন্ডিশনিং না করা
২। চুল ওভার ওয়াশ না করা
৩। চুলের যত্নে ভুল্ভাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
৪। হিট প্রটেক্টর স্প্রে ছাড়া চুল নিয়মিত স্ট্রেইট করা
৫। অদক্ষ হাতে চুল কালার বা রিবন্ডিং করা

লম্বা চুলের পরিচর্যা করার সহজ উপায়
এই ব্যস্ত সময়ে আমাদের সকলেরই সময় খুবই কম। আমাদের নানী, দাদীরা অনেক সময় নিয়ে চুলের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তেল, শ্যাম্পু তৈরী করতেন। কিন্তু আমাদের এখন আর তেমন হাতে সময় নেই। আর এই পলুশ্যন, স্ট্রেস, ভেজাল ব্যবহার করতে করতে চুলের বারোটা বেজে যায়। এখনকার সময়ের মানুষেরা সেলফ কেয়ারের প্রতি অনেক বেশি সচেতন। চলুন এখন জেনে নিই কিভাবে লম্বা চুলের যত্ন নিবো।
লম্বা চুলের যত্নে অয়েল ম্যাসাজ
মজবুত ও লম্বা চুলের যত্নে অ্যাভোকাডো ওয়েলের উপকারিতা সম্পর্কে সকলেরই জানা আছে। এই তেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ, ডি ও ই থাকে এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যারা বড় চুল পেতে চায় তাদের আগা দূর্বল হয়ে গেলে হেয়ার সল্যুশনের জন্য এই তেলটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। নারকেল তেলের সাথে মিশিয়েও এই তেল ব্যবহার করা যায়। আবার এমনিতেও এই তেল ব্যবহার করা যায়। এই তেল চুলের স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা হয়। সপ্তাহে দুই/ তিনদিন এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলে লাগিয়ে রেখে আধা ঘণ্টা পর মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। তাহলে চুল অনেক বেশি সফট ও নারিশ হবে। তাই চুলের সুরক্ষায় অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
চুল মুছতে নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করুন
মোটা খসখসে কাপড় দিয়ে চুল পেচিয়ে রাখলে চুলের আদ্রর্তা হারিয়ে যায়। ভেজা অবস্থায় চুল অনেক বেশি নরম থাকে তাই ভেজা চুল গামছা অথবা তোয়ালে দিয়ে ঝাড়া উচিত নয়। তাহলে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই ভেজা চুল সফট গেঞ্জি কাপড় দিয়ে ভালো করে চেপে চেপে মুছতে হবে। এইভাবে চুলের যত্ন নিলে চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করা যায়। লম্বা চুল শুকানো ঝামেলা মনে করে অনেকেই। ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করা উচিত সবসময়। প্রয়োজন না হলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়।
ডিপ কন্ডিশনিং
লম্বা চুলের জন্য অতিরিক্ত কিছু যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। চুল বড় হতে থাকলে একসময় চুলে রুক্ষতা দেখা যায়। ড্রাই ও ডিহাইড্রেট চুলের জন্য কিছু সমস্যা দেখা যায় যেমন- চুলের আগা ফাটা ও চুল লালচে হয়ে যাওয়া। চুলের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং করা প্রয়োজন। নানা ধরনের হেয়ার মাস্ক, নারিশিং মাস্ক, হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চুলের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন একটি মাস্ক বেছে নিতে হবে।
লম্বা চুলের জন্য ঘরোয়া হেয়ার প্যাক
চুলের বেসিক হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি চুলের যত্নে সপ্তাহে ১/২ দিন বিভিন্ন ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত। হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল, লম্বা, কালো ও ঘন হয়।
চুলের কিছু ঘরোয়া হেয়ার প্যাক-
১। এগ প্রোটিন হেয়ার প্যাক-
চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার অনেক কাল আগে থেকেই চলে আসছে। চুলের লেন্থ বুস্টিং প্যাকে ডিম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডিম, অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা জেল ও সামান্য দুধ মিশিয়ে চুলে লাগাতে হয়। তারপর মোটা দাঁতের চিরুনী দিয়ে চুল আচড়িয়ে নিতে হবে। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই হেয়ার প্যাক চুলকে ন্যাচারালি স্ট্রেইট, সিল্কি ও শাইনি করে। লম্বা চুলের রুক্ষতার যেকোন সমস্যা সমাধান করতে এই প্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
২। আমলা হেয়ার প্যাক-
আমলাতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড থাকে যা চুলের ফলিকলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। লম্বা চুলের যত্নে আমলকি বা আমলা পাউডার ব্যবহার করা খুবই উপকারী। আমলা পাউডার, টকদই, ডিমের কুসুম ও কয়েক ফোটা নারকেল তেল একসাথে পেস্ট বানিয়ে লাগাতে হবে। এটি স্ক্যাম্পে ও সমস্ত চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারপর ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে ১/২ বার লাগাতে হবে চুলে।
ঘন, কালো ও লম্বা চুলের যত্নে এসব হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চুল সঠিক পুষ্টি পাবে।
আরো পড়ুনঃ