
শিশু খাদ্য হিসেবে বয়স ছয় মাস হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। কিন্তু –
কিন্তু আপনি জানেন কি আপনার শিশু বারতি খাদ্য খাওয়ার জন্যে প্রস্তুত কি না ? যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বলছে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা থেকে বোঝা যা যে শিশুর বারতি খাবার দরকার।
শুরুতে শিশুদের কী ধরণের খাবার দেয়া উচিত?
রাতে ঘুম থেকে উঠে যায় ও দুধ খুজতে থাকে বা খাবার খুজতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে তার শারীরিক বৃদ্ধি তারাতারি হচ্ছে এবং তার অতিরিক্ত খাবার দরকার।
- আপনার শিশু যদি খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায়।
- মাথা সোজা করে বসার চেষ্টা করে বা বসে
- খেলনা বা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে।
- এসব দেখলে বুঝতে হবে যে আপনার শিশুর বারতি খাবার দরকার
ইনফ্যান্ট ইয়াং চাইল্ড ফিডিং নামে একটা পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে শিশুর জন্মের ১৮১ তম দিন থেকে বুকের দুধ ছাড়াও অন্যান্য খাবার দেওয়া যেতে পারে।
সৈয়দা শারমিন আক্তার। প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সিলিং সেন্টার
মায়ের বুকের দুধে যে ধরনের উপাদান থাকে সাধারণত সে ধরনের উপাদান হজম করার সক্ষমতা শিশুর থাকেই। যেমন মায়ের বুকের দুধে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইডেট বা সরকরা এবং প্রোটিন থাকে। তাই কার্বোহাইড্রট বা সর্করা আছে এমন খাবার প্রথমে দিতে হবে। যেমন আলু চটকানো, ভাত চটকানো ইত্যাদি।
শিশুকে এগুলো মুখে দিয়ে দেখতে হবে যে সে কতটুকু নিতে পারে।
- আর পড়ুনঃ
- মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় ও দুধ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য
- করোনার সময় শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণ
- শিশুদের ডায়রিয়া হলে কি করবেন

– শুরুতে শিশুদের কী ধরণের খাবার দেয়া উচিত?
- শিশুদের শুরুতেই ফলমুল ও শাকসবজি দেওয়া যেতে পারে। যেমন গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মিষ্টি স্বাদের সবজি ইত্যাদি থাকতে পারে তালিকায়।
- ফলের মধ্যে আপেল নাসপাতি ও কলা দিতে পারেন।
- শুরুতে যেকোনো একটি ফল বা সবজি দিয়ে শুরু করতে হবে, যেমন শুধু আপেল কিংবা শুধু গাজর। পরে ধীরে ধীরে সবজি মিক্সট করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এসব খাবারে কোনো লবণ বা চিনি মিক্সড করা যাবে না।
– শিশুকে কি ডিম খাওয়ানো যাবে?
ইনফ্যান্ট অনেকে শিশুদের ডিমের কুসুম দিতে বলেন । কিন্তু শিশুরা সরাসরি খেতে পারেন না। এছাড়া ডিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জিবানু থাকতে পারে যা শিশুদের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে।
সৈয়দা শারমিন আক্তার। প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সিলিং সেন্টার
তবে কুসুম না হলেও ডিমের যে সাদা অংশ থাকে সেটি অবশ্যই দেওয়া যেতে পারে । তবে লক্ষ রাখতে হবে অনেক সময় ডিমে এলার্জি থাকতে পারে। পুষ্টিবিদরা বলছেন যে, শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় বুঝে নিতে হিবে যে শিশু সেটি হজম করতে পারছে কি না বা কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। কারণ এ বয়সে ডায়রিয়া হলে সেটি মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।
সেরেলাক দিবেন কি না?
অনেকে বাচ্চাকে বাজার থেকে কেনা সেরেলাক বা ফরমুলা মিল্ক দিয়ে থাকেন। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন বাজার থেকে কেনা সেরেলাক বা ফরমুলা মিল্ক শিশুকে না দেওয়াই ভালো। ঘরেই সেরেলাক তৈরি করা যায় বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদেরা। সেক্ষেত্রে ভাজা চালের গুড়া, ভাজা ডালের গুড়া, এক মুঠ গুড়, আর কাবার তেল ও পানি মিশিয়ে সেরেলাক তৈরি করা যায়।
শিশুর খাবার কীভাবে তৈরি করবেন?
শিশুর খাবার তৈরি করার সময় মাথায় রাখতে হবে যে সেটা যাতে পুরোপুরি ব্লেন্ড করে ফেলা না হয়। সিদ্ধ কোনো কিছু খেতে দেয়া হলে বা পিঊরি তৈরি করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে সেটা যেনো একেবারে মিহি হয়ে না যায়। হাতে চটকে যতটুকু গলানো যায়, বা ডাল ঘুটনি দিয়ে যতটুকু মসৃণ করা যায় ততটুকুই রাখতে হবে।

খিচুড়ি কীভাবে খাওয়াবেন?
ছয় মাস বয়সের পর পরই শিশুকে খিচুরি দেওয়া টা উচিত নয় বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদেরা। বরং খাবারের সাথে কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর শিশুদের খিচুরি খাওয়ান যেতে পারে। তবে খিচুরি রান্না করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। খিচুরিতে চাল যতটুকু দিতে হবে তার অর্ধেক দিতে হবে ডাল। আর সবজি দিতে হবে এক টুকরা পরিমাণ। মাছ মাংস যাই হোক সেটাও দিতে হবে এক টুকরা পরিমাণ, অর্থাৎ ৩০ গ্রাম পরিমাণের মত।
অনেকে পাঁচ মিশালি ডাল দিয়ে থাকেন যা মোটেই উচিত নয়। এতো কম বয়সের শিশুদের এতো বেশী পুষ্টির দরকার হয় না। বেশীরভাগ পুষ্টি শিশু তার মায়ের বুকের দুধ থেকেই পায়।
সৈয়দা শারমিন আক্তার। প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সিলিং সেন্টার
জুস, আইসক্রিম কখন দেবেন?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুদের জুস যেমন কমলার জুস, যেমন কমরার বা অন্য কোনো জুস এগুলো নয় মাস বয়সের পর থেকে দিতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে , সেটা হলো জুসের সাথে সমপরিমান পানি মিশিয়ে তারপড় শিশুকে দিতে হবে। যাতে হজমে সমস্যা না হয়। তবে এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। কারণ এই বয়সে শিশু খুটে খুটে খেতে থাকে। খাবার পরে গেলে সেটি আবার মুখে দেয়। দুই বছর বয়সের পর ঘরে তৈরি আইসক্রিম ও দেওয়া যেতে পারে।
শিশুকে কতটুকু খাবার, কখন দেবেন?
৬-৯ মাস মায়ের দুধের পাশাপাশি ২৭০ কিলোক্যালরি, ৯ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ৪৫১ কিলোক্যালরি , ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত ৭৪৮ কিলোক্যালরি দরকার হয়।
সৈয়দা শারমিন আক্তার। প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সিলিং সেন্টার
–এই খাবার খাওয়ানর নিয়ম হচ্ছে
- ৬-৯ মাস বয়স পর্যন্ত আধা কাপ পরিমাণ দিনে দুই বার দিতে হবে
- মাঝে একবার স্ন্যাকস দেওয়া যেতে পারে (আলু চটকানো, আপেলের পিউরি ইত্যাদি)
- ৯ মাস থেকে ১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের আধা কাপ পরিমাণ দিনে তিন বার এবং দিনে দুই বার স্ন্যাকস দিতে হবে।
- ১ থেকে ২ বছর বয়সি শিশুদের জন্যে স্বাভাবিক খাবার দিনে তিন বার দেওয়া যায়। মাঝে মাঝে দুইবার স্ন্যাকস যেমন ফলমুল, হালুয়া ইত্যাদি।
- তবে এই পরিমানের পুরো খাবার যদি শিশু খেতে না পারে তবে তাকে জোর করে খাওয়ান যাবে না।
- পুষ্টিবিদরা বলছেন ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে শিশু যতটুকু খায় তাকে ঠিক ততটুকুই খাওয়াতে হবে।
- বেশি সময় ধরে খাওয়ালে খাবারে খাবারে পুষ্টিগুন থাকে না।
- আরো পড়ুনঃ
- মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ
- শিশুর পরিপূরক খাদ্য
- শিশুর দুধ খাওয়ানোর রীতি
- গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ব্যবস্থা
- মায়ের দুধ পানের উপকারিতা
কী কী খাবার এড়িয়ে যাবেন?
- অনেকে শিশুকে ঘি খাওয়াতে চায়। তবে ৯ মাস বয়সে আগে শিশুকে ঘি এর পরিবর্তে সাধারন রান্না করার তেল দেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা।
- আইসক্রিম, চকলেট, চিপস এগুলো দেওয়া যাবে না।
- দুধের তৈরি জিনিস, অতিকিক্ত লবণ বা চিনি কোনোটাই দেওয়া যাবে না।
- প্রক্রিয়াজাত যেকোনো খাবার শিশুকে না দেওয়াই ভালো।
- ১ বছর বয়সের আগে শিশুকে মধু দেওয়াটা নিরাপদ নয় কারণ এতে ব্যকটেরিয়া থাকতে পারে।
- আস্ত বাদাম না দিয়ে গুড়ো বা মিহি করে দেওয়া যেতে পারে যাতে গলায় আটকে না যায়।
এই রকম গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
2 Comments