
করোনা ভাইরাসের সারা বিশ্বের সকল মানুষ ভীতিতে আছে। যতই দিন যাচ্ছে করোনা আগের থেকে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। করোনার ভয়াবহতা এখন সারা বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হতে না হতেই যেন তৃতীয় ঢেউ আবার শুরু হতে চলেছে।
করোনার এই প্রবল ঢেউতে শিশুরাও যেন মাফ পাচ্ছে না। তাদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে বাবা মা যেন আরো ভেঙ্গে পড়ছে। শিশুদের করোনা হলে তেমন কোন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। ফলে এইটা করোনা নাকি ভাইরাল ফিবার এই নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে।
শিশুদের করোনার কিছু উপসর্গ জেনে নেওয়া যাক-
যেহেতু শিশুদের বড়দের মতো উপসর্গ দেখা যায় না। তাদের উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে।
১। বড়দের মতো শিশুদের জ্বর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। শিশুদের করোনা ভাইরাসে আক্রমণ করলে জ্বর ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। এটি ভাইরাল ফিভার ভেবে অবহেলা করলে চলবে না।
২। কোভিডে আক্রান্ত হলে জ্বরের সাথে কাপুনি, দূর্বলতা, নাকে গন্ধ না পাওয়া, গা ও হাতে, পায়ে ব্যথা হয়। অবশ্যই ৩ দিনের বেশি জ্বর থাকলে করোনা টেস্ট করানো উচিত।
৩। শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে। আবার শিশুরা খাবার হজম করতে পারছে না মনে হলেও করোনা বলে ধরে নেওয়া যায়।
৪। শিশুদের হালকা কাশি হতে পারে। আবার কাশির পাশাপাশি বুকে ও গলায় ব্যথা থাকলে করোনার উপসর্গ বলেই ধরে নেওয়া হয়।
৫। করোনাতে আক্রান্ত হলে শিশুর এনার্জি কমে যায়। ফলে শিশু বারবার ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
৬। শিশুর অক্সিজেনের মাত্রা সবসময় চেক করা উচিত। অক্সিজেনের মাত্রা যদি ৯৪ শতাংশের নিচে নেমে যায় তাহলে মাঝারি উপসর্গ বলে ধরে নেওয়া যায়। আর যদি ৯০ শতাংশের নিচে নামে তাহলে গুরুতর অসুস্থ বলে ধরা হয়।
৭। শিশুর শরীরে লাল লাল ভাব, র্যাশ থাকলে আগে থেকেই সর্তক হতে হবে। এটিও শিশুদের করোনা সংক্রমণের অন্যতম উপসর্গ।

নতুন ভাইরাসের ধরন শিশুদের জন্য বিপদজনক কেন?
করোনা ভাইরাসের প্রথম ওয়েভ শিশুদের জন্য তেমন বিপদজনক বলে ধরা হয়নি। কিন্তু এখনকার ওয়েভটা করোনার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে আঘাত হানছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও অ্যান্টিবডি ক্ষমতাতেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের বাইরে থাকার প্রোটিন স্পাইকের সাহায্যে ভাইরাসটি শরীরের কোষে আটকে যায় ও বংশবিস্তার করে। এভাবেই বেড়ে চলছে করোনার সংক্রমণ।
ভাইরাস যেহেতু সংক্রমণ ক্ষমতা ও কৌশল পরিবর্তন করেছে ফলে বয়স্কদের সাথে সাথে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের শরীরে লক্ষণ খুব কম প্রকাশ পাচ্ছে।
শিশুদের থেকে বড়দের সংক্রমিত হওয়ার ঝুকি কতখানি?
যেহেতু শিশুদের শরীরে করোনার উপসর্গ তেমনভাবে প্রকাশ পায় না। তাই এটি নিরব ঘাতক রুপে কাজ করে। ফলে শিশুদের থেকে বড়দের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা খুব বেশি বলে ধরা যায়।
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি দিন দিন বেড়েই চলছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে ফলে শিশুদের থেকে বড়দের দিকে যেতে পারে। তাই এই ঝুকি থেকে আমাদের বাচতে হলে যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিতে হবে।
কোন বয়সের শিশুদের সংক্রমণের ঝুকি বেশি?
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি কোন বয়সের লোকই পাচ্ছে না। ১-১৬ বছর বয়সী যেকোন শিশুই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুও করোনা পজিটিভ হতে পারে। প্রসবের সময় সন্তান মায়ের থেকে এই ভাইরাসের শিকার হতে পারে।
যেসব শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যেসব শিশুদের শারীরিক কোন সমস্যা আছে তাদের করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
শিশুদের করোনা প্রতিরোধে করণীয়-
১। শিশুদের আলাদা রাখা-
শিশুরা তাদের সংক্রমণের ব্যাপারে খুব একটা ভালো বুঝতে পারে না। তাই শিশুদেরকে তাদের পরিবারের বয়স্কদের থেকে দূরে রাখতে হবে। যাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদেরকে শিশুদের থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে শিশুদের ঘর আটকে রাখতে হবে।
২। আক্রান্ত শিশুদের আইসোলেশনে রাখা-
করোনাতে আক্রান্ত শিশুদের প্রয়োজনে আইসোলেশনে রাখতে হবে। দরকার হলে শিশুদের বাড়ি থেকে দূরে একটা হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে রাখতে হবে যেখানে শুধু শিশুরা থাকে।
৩। বাইরে থেকে এসে শিশুদের কাছে না যাওয়া-
যেহেতু শিশুদের স্কুল বন্ধ তাই তাদেরকে বাড়ির বাইরে যেতে হচ্ছে না। তাই বড়রা যারা বাড়ির বাইরে যেকোন কাজে যাচ্ছেন তারা যেন বাইরে থেকে এসে শিশুদের স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৮। শিশুদের সচেতন করা-
শিশুদেরকে করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদেরকে সম্পূর্ণ বিষয়টা বুঝাতে হবে।
শিশুদেরকে বোঝাতে হবে কোথায় কোথায় হাত দেওয়া যাবে না। কোন কোন খাবার শিশুকে খেতে হবে আর কোন কোন খাবার শিশু এসময়ে খেতে পারবে না সে বিষয়ে ধারণা দিতে হবে।
৫। পরিবারের অন্যদের মাস্ক পড়তে হবে-
পরিবারের যারা নিয়মিত বাইরে যান তাদেরকে মাস্ক পড়তে হবে। তাদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলেই শিশুরা সুস্থ থাকতে পারবে।
শিশু্কে করোনা থেকে বাচাতে হলে পরিবারের সকলকে সচেতনতা মেনে চলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
- মিষ্টি কুমড়া কেন খাবেন জেনে নিন
- শিশুদের কোন বয়সে কি খাওয়ান উচিত এবং কি খাওয়ান উচিত নয়।
- মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় ও দুধ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য
- করোনার সময় শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণ
- মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ
- শিশুদের ডায়রিয়া হলে কি করবেন
3 Comments