
শিশুর জন্ম থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র দুধই শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু এর পর থেকে অন্যান্য খাবার না দিলে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর দুইটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ, এই বয়সের শিশুর যে পরিমাণ দুধের প্রয়োজন,মায়ের কাছ থেকে সে পরিমাণ দুধ পাওয়া কঠিন। দ্বিতীয় কারণ, শিশুর দেহ বর্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান দেহে নেই। যেমন ভিটামিন সি এবং লোহা দুধে এতো কম যে এতে শিশুর চাহিদা পূরণ হয় না। অর্থাৎ দুধে ভিটামিন সি এবং লোহা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। তার উপর ফুটিয়ে নেওয়ার সময় গরুর দুধে যেটুকু ভিটামিন সি থাকে তাও নষ্ট হয়ে যায়। জন্মের সময় শিশু মাঋতগর্ভ থেকে যে পরিমাণ লোহা নিজের দেহে সঞ্চিত করে নিয়ে আসে, তা দিয়ে তার প্রয়োজন ৫-৬ মাস পর্যন্ত মিটতে পারে। কিন্তু এই সময়ের পর লোহা ও ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য না পেলে শিশুর এনিমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসময় ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি এর চাহিদা বেশী হয়। যা শুধুমাত্র দুধ থেকে পূরণ হওয়ার না। ভিটামিন সি এর জন্য ফলের রস, লোহার জন্য ডিমের কুসুম, ভিটামিন এ ও ডি এর জন্য কডলিভার ওয়েল খাওয়ানো উচিত। কডলিভার তেল পাওয়া না গেলে গাঢ় সবুজ শাক ও গাজর ভালো করে সিদ্ধ করে ছেকে আশ বাদ দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুকে কিছুক্ষণ সকালের রোদের শুইয়ে রাখলে শিশুর ত্বকের নিচে ভিটামিন ডি তৈরী হয়, যা শিশুর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুর ওজন বৃদ্ধির হারে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু এই সময়ের পরেই এদের দৈহিক বৃদ্ধিতে বিরাট প্রভেদ দেখা যায়। এর প্রধান কারণ ৬ মাস বয়সের পর শিশুর বিশেষ পুষ্টি চাহিদার ব্যাপারে আমাদের অজ্ঞতা। জন্মের সময় মাঋতগর্ভ থেকে যে সমস্ত উপাদান শিশু তার দেহে সঞ্চিত করে আনে, সেগুলি প্রথম ৫-৬ মাস শিশুকে বিভিন্ন অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু পরবর্তীকালে এগুলো না পেলে দেহে এগুলোর অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া এই বয়সের শিশুর ক্যালরি চাহিদা যে হারে বাড়তে থাকে, তার মায়ের দুধের পরিমাণ সেহারে বাড়তে না থাকায় শুধুমাত্র ক্যালরির অভাবে থেকেও শিশুর যথাযথ বর্ধন ব্যাহত হয়।
এই কারনে ৩/৪ মাস বয়স থেকেই নতুন খাদ্য শিশুকে একটু একটু করে অভ্যস্ত করাতে হবে। তা না হলে ৬ মাসের পর সে নতুন খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে। ভাত, ডাল ও সবুজ শাক সিদ্ধ করে ছেকে একসাথে মিশিয়ে সেই নরম খাদ্য ২/১ চামচ করে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। অনেকের ধারণা ভাত শিশুর জন্য ভালো নয়। কিন্তু ভাত অত্যন্ত সহজপাচ্য হওয়ায় শিশুর জন্য খুবই উপযোগী এবং প্রথম শক্ত খাদ্য হিসাবে ৪/৫ মাস বয়সের সময় থেকেই দেওয়া যেতে পারে। এর সাথে সামান্য ডাল, নরম সিদ্ধ সবজি অল্প অল্প করে খাওয়ানোর অভ্যাস করা উচিত। সুজিও ভাতের মতো সহজপাচ্য খাদ্য, যা দুধ দিয়ে রান্না করলে খুব নরম ও সুস্বাদু হয় বলে বাচ্চাকে খুব সহজেই খাওয়ানো যায়।
আরো পড়ুনঃ
4 Comments