স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে কার্যকারী খাদ্যতালিকা
স্কুল বয়সী ছেলেমেয়েদের খাদ্য

স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের চাহিদা অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি ৬-১২ বছর বয়স পর্যন্ত, এদের চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। দ্বিতীয়টি ১৩-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। এইসময় যৌবনের উন্মেষ হয় বলে সকল রকম দেহের পরিবর্তন ও বৃদ্ধি ঘটে এবং সেইজন্য চাহিদাও সর্বাপেক্ষা বেশী থাকে। ১৩-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের খাদ্য চাহিদা পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে। আমাদের দেশে এই বয়সী ছেলেমেয়েরা যেসক্ল পুষ্টি উপাদানের অভাবে ভোগে, তার মধ্যে প্রোটিন, ক্যালরি, লোহা ও ভিটামিন এ প্রধান। এই অভাবের কারণ তিনটি।
১. দারিদ্র
২. এই বয়সের খাদ্য চাহিদা সম্পর্কে অজ্ঞতা
৩. স্কুলে ও খেলার মাঠে বেশি সময় কাটানোর জন্য খাওয়ার সময়ের অভাব
এই বয়সের বাড়তি চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রোটিন, ক্যালরি, লোহা ও ভিটামিন এ -র যেন অভাব না হয়, এরুপভাবে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। দারিদ্রের কারণে উপযুক্ত খাদ্য ক্রয় করা সম্ভব হয় না তেমনি এ বয়সের পুষ্টি চাহিদার প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়া বা অমনোযোগী হওয়ার কারনেও এরা অপুষ্টির শিকার হয়। স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েরা সকাল ১০ টা- ৪টা স্কুল করলে বাসায় খাওয়ার সময় পায় ৯টায় ও ৫ টায়। এই ৮ ঘণ্টা সময় বাইরে থাকার সময়, সামান্য কিছু যে টিফিন খায় তা তার প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। সকাল বিকাল খাওয়ার সময়ে প্রায়ই তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে বলে ভালো করে খেতে পারে না। অথচ এই বয়সে খাওয়ার চাহিদা অনেক বেশি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও খাদ্যশক্তির অভাবের মারাত্নক শিকার। এই অপুষ্টি দূর করতে স্কুল লাঞ্চ প্রোগ্রাম অনেক দেশেই গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুলে উপযুক্ত খাদ্য সরবারহ করলে ছেলেমেয়েদের পুষ্টির অভাব যেমন দূর হয় তেমনি সুষম খাদ্য গ্রহণের শিক্ষা ও অভ্যাস দুটোই হয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের দেশে এরকম ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি। অতএব পরিবারের বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের পুষ্টির প্রয়োজন মা বাবাকেই অনুধাবন করতে হবে। দৈনন্দিন বরাদ্দকৃত খাদ্যবস্তুগুলি আর্থিক সামর্থ্য অনুয়াযী খাওয়াতে হবে। সকালের নাশতার সময় ছেলেমেয়েদের ক্ষিদে থাকে বেশি, একারণে এসময় দৈনন্দিন বরাদ্দর প্রায় ১/৪ ভাগ দেওয়া ভালো। ৯ টার সময় তাড়াহুড়ো করে যেমনি সে খেতে পারুক, টিফিনটা যদি সুুচারুরুপে পরিকল্পিত হয় তবে এতেও চাহিদার অনেকটা পূরণ হয়। টিফিন হওয়া উচিত এমন যা-
১। সহজে বহন করা যায়।
২। অনেকক্ষণ থাকলেও নষ্ট হয়ে যায় না।
৩। ঘনীভূত ক্যালরির উৎস অর্থাৎ অল্প আয়তনে বেশি খাদ্য মূল্য।
৪। মুখরোচক ও সহজপাচ্য।
আরো পড়ুনঃ প্রাকস্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য সবচেয়ে ভালো খাদ্যব্যবস্থা
বাচ্চাদের পুষ্টি সম্পর্কে জানতে পরুন বাল্যকালে ও কৈশোরে শিশুর পুষ্টি
কয়েকটি টিফিনের নমুনা
আটার রুটি হালুয়া, কলা | পাউরুটি, মাখন, ডিম, কলা | দই চিড়া চিনি কলা | আলুর চপ কমলা |
পরোটা ডিম ভাজা শশা | মিষ্টি আলু সিদ্ধ চিনা বাদাম ফল | মুড়ি বাদাম বাতাবী লেবু |
বছর | ওজন ( ছেলে ) কেজি | মেয়ে | উচ্চতা ( ছেলে ) সেন্টিমিটার | মেয়ে |
৬ | ১৬.৩ | ১৬.০ | ১০৮.৫ | ১০৭.৪ |
৭ | ১৮.০ | ১৭.৬ | ১১৩.৯ | ১১২.৮ |
৮ | ১৯.৭ | ১৯.৪ | ১১৯.৩ | ১১৮.২ |
৯ | ২১.৫ | ২১.৩ | ১২৩.৭ | ১২২.৯ |
১০ | ২৩.৫ | ২৩.৬ | ১২৮.৪ | ১২৮.৪ |
১১ | ২৫.৯ | ২৬.৪ | ১৩৩.৪ | ১৩৩.৬ |
১২ | ২৮.৫ | ২৯.৮ | ১৩৮.৩ | ১৩৯.২ |
১৩ | ৩২.১ | ৩৩.৩ | ১৪৪.৬ | ১৪৩.৯ |
১৪ | ৩৫.৭ | ৩৬.৮ | ১৫০.১ | ১৪৭.৫ |
১৫ | ৩৯.৬ | ৩৬.৮ | ১৫৫.৫ | ১৪৯.৬ |
১৬ | ৪৩.২ | ৪১.১ | ১৫৯.৫ | ১৫১.০ |
১৭ | ৪৫.৭ | ৪২.৪ | ১৬১.৪ | ১৫১.৫ |
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য খাদ্য তালিকাঃ
খাদ্যবস্তু ( গ্রাম ) | ছেলেমেয়ে (৬-৯) বছর | ছেলেমেয়ে (১০-১২) বছর | ছেলে (১৩-১৫) বছর | (১৬-১৮)বছর | মেয়ে ( ১৩-১৮ ) বছর |
ডাল | ২২০ | ২৯০ | ৪০০ | ৪২০ | ৩২০ |
ডাল | ৬০ | ৬০ | ৫০ | ৫০ | ৪০ |
সবুজ শাক | ৭৫ | ১০০ | ১০০ | ১০০ | ১৫০ |
ফল অন্যান্য সবজি ( আলুসহ ) | ৫০ | ৭৫ | ১৫০ | ১৭৫ | ১৫০ |
ফল | ১০০ | ১০০ | ১০০ | ১০০ | ১০০ |
দুধ | ৪০০ | ৪০০ | ৪০০ | ৪০০ | ৪০০ |
তেল ঘি | ৩০ | ৩০ | ৩০ | ৪০ | ৩০ |
মাছ, মাংস, ডিম | ৬০ | ৬০ | ৮০ | ৮০ | ৮০ |
গুড়-চিনি | ৩০ | ৩০ | ৩০ | ৩০ | ৩০ |
চীনাবাদাম | ৫০ |
আরো দেখুনঃ অপরিণত বা অকালীয় শিশুর খাদ্য
One Comment